হুমকীর মুখে জাবির অতিথি পাখির আবাসস্থল

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

ফিচার

হুমকীর মুখে জাবির অতিথি পাখির আবাসস্থল

  • শাহিনুর রহমান শাহিন, জাবি
  • প্রকাশিত ২২ নভেম্বর, ২০১৮

প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো অতিথি পাখি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শীত আর অতিথি পাখি যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতি বছর শীতে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে থাকে গোটা ক্যাম্পাস। দিনজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে অতিথি পাখির বিচরণ এক অপরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করে। কিন্তু অনুপযুক্ত পরিবেশ আর অনিরাপদ আবাসস্থলের ফলে হুমকীর মুখে পড়েছে অতিথিরা। এসব অতিথি পাখি এখানে নির্ভাবনায় মেতে উঠতে পারছে না ফলে ধীরে-ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে জলকলিতে তাদের কলকাকলি।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতি বছর অতিথি পাখি আসার আগে জলাশয়গুলো পরিস্কার করে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়, বাঁশ ও জলজ উদ্ভিদ দিয়ে বিশেষ মাঁচা তৈরি করা এবং দর্শনার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক বিলবোর্ড টাঙানো হয়। কিন্তু এবছর সে বিষয়ে প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই। জলাশয়গুলো কচুরিপনা-আগাছা ও ময়লা-আর্বজনায় ভরে গেছে। লেকের পানি কালো হয়ে ভেপসা গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়াও জলাশয়গুলোর কোল ঘেঁষে দর্শনার্থীদের কোলাহল, পানিতে খাবারের উচ্ছিষ্টা অংশ ফেলা, গাড়ির হর্ণ, মাইকিং ও পাখিদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। প্রতিদিন হাজারো দর্শণার্থী ক্যাম্পাসে পাখি দেখতে আসেন কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও তার কোন তোয়াক্কা করছেন না তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় ১৯ টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের জলাশয়, সুইমিংপুল ও বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন জলাশয়, পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয় ও ছাত্রীদের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন ও পরিবহন চত্বরের পেছনের জলাশয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি বিচরণ করে। কিন্তু এবছর ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের জলাশয় ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয় ছাড়া আর কোথাও অতিথি পাখির বিচরণ দেখা যায় নি। অন্যান্য জলাশয়গুলোর মধ্যে সুইমিংপুল ও বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন জলাশয় কচুরিপানা ও ময়লা-আর্বজনায় ভরে গেছে। অতিথি পাখির বিচরণের কোন পরিবেশ নেই। কালচে পানি থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে আবার কোনো কোনোটি সংরক্ষনের অভাবে ভরাট হয়ে ছোট হয়ে গেছে।

ক্যাম্পাসে পাখি মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক বছর সুইমিংপুল ও বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন জলাশয়সহ সবগুলো মোটামুটি পরিস্কার ছিল। ফলে অতিথি পাখি বিচরণ করেছিল। কিন্তু এ বছর জলাশয়গুলো পুরোপুরি পরিষ্কার না করার কারণে অতিথি পাখি বিচরণ করতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে জলাশয়গুলো পরিস্কার করলে অতিথি পাখিরা অবাধে বিচরণ করতে পারতো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন বলেন, পাখিদের আবাসস্থল উপযুক্ত করতে ইতিমধ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এই সপ্তাহে কাঁটাতারের বেড়া, জলজ মাঁচা ও নির্দেশিকা টানায় দেয়া হবে। দর্শণার্থীদের জলাশয়গুলোর কোল ঘেঁষে কোলাহল করা, হর্ণ বাজানো, গাড়ি পার্কিং নির্দেশনা থাকলেও তারা এটা মানছে না। এ বিষয়ে নিরাপত্তা শাখার দৃষ্টি আর্কষণের কথা জানান তিনি। কচুরিপনা, ময়লা-আর্বজনার বিষয়ে তিনি বলেন, পাখির আসার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও সুইমিংপুল সংলগ্ন জলাশয় দু’টি লিজ দেয়ার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয় নি। এই দু’টি জলাশয় প্রায় ৬২ একর জায়গা জুড়ে আছে যা পরিস্কারের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট নেই। তারপরও আমি প্রশাসনের সাথে এই বিষয়ে কথা বলব।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads