বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারকে গদিচ্যুত করার হুমকিকে জুজুর ভয় বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলীয় প্রধানের চিকিৎসার দাবিতে গত শনিবার গণ-অনশন শেষে আজ সোমবারের কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারকে গদিচ্যুত করারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তবে বিএনপির এই হুংকার আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, সরকার পতনের কথা বিএনপির মুখে মানায় না। দেশের অধিকাংশ মানুষই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায়।
চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি অপরাজনীতি করছে দাবি করে তারা বলছেন আন্দোলন করার সক্ষমতা বিএনপির নেই। আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা হলে কঠিন জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক চিকিৎসা নিয়ে বিএনপিকে অপরাজনীতি না করার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে মানবিক কারণে দেশের বাইরে চিকিৎসা করানোর কোনো নিয়ম আছে? দেশেই খালেদা জিয়াকে স্বাধীনভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন তারা। এই সুযোগও কেউ কাউকে দেয় না। প্রধানমন্ত্রী মানবিক বলে এই সুযোগ দিয়েছেন। আন্দোলনের দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি না। তাদের এসব হুংকারের কাছে আমরা মাথা নত করবো না।
দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমরা মনে করি জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। আমরা তাদের এসব হাঁকডাকে ভয় পাই না। তবে আন্দোলনের নামে তারা যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জনগণ তাদের ঘর থেকেই বের হতে দিবে না।
দলটির জেলা পর্যায়ের নেতারা বলেন, আন্দোলনের কথা বলে বিএনপি মানুষকে টানতে পারবে না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের আমলে শান্তিতে আছে। দীর্ঘদিন থেকেই তারা সরকার হটাও আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। জনগণও তাদের পাশে নেই। তাদের যেকোনো বিশৃঙ্খল কার্যক্রম আমরা প্রতিহত করবো। সরকার খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ মানবতা দেখিয়েছে বলেও দাবি তাদের। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলে দলটির সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বিএনপি সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, আমাদের সংসদ থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করবেন না। আমি আগেও বলেছি, আমাদের ন্যায্য দাবি যদি মেনে নেওয়া হোক। তা না হলে আমরা সংসদ থেকে বের হবো কি না, সে বিষয়ে ভেবে দেখবো।
তিনি বলেন, সেদিন সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসা প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। ৪০১ ধারার সঠিক প্রয়োগ করলে আগেই খালেদা জিয়া মুক্তি পেতেন। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হবে, তা দমনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করতে দিচ্ছে না। ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ৩০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির দণ্ড মওকুফ করেছে।
হারুনুর রশীদ বলেন, আইনমন্ত্রীর পেছন থেকে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে তাকে ডিক্টেক্ট করছেন, তা লজ্জাজনক। আইনমন্ত্রী সিনিয়র আইনজীবী হয়েও যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা হাস্যকর। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনতে। আমরা তো এই দাবি করিনি। আমাদের দাবি, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হোক। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হোক। ২০১৮ সালের মধ্যরাতের নির্বাচনের সংসদে আমরা যোগ দিয়েছি উল্লেখ করে হারুনুর রশিদ বলেন, প্রতিজ্ঞা করেছি জনগণের কথা বলবো। এখন জনগণের যে সংকট, গণতন্ত্রের সংকট, এই অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে।
প্রায় আধাঘণ্টা ধরে চলা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, মোশাররফ হোসেন, হারুনুর রশিদ ও সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানাসহ আরো অনেকে। মানববন্ধনে সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিদেশে যেতে না দেওয়ার কারণে উন্নত চিকিৎসার অভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। দেশে আইনের শাসন থাকলে খালেদা জিয়া এমনিতেই জামিন পেতেন। এখনো ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। আইনমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তা পুরোপুরি মিথ্যা অপব্যাখ্যা।
বিএনপির এই নেত্রী বলেন, বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে। তিনি এখন সিসিইউতে। তার পক্ষে কীভাবে জেলে গিয়ে আবেদন করা সম্ভব না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসায় আইনি কোনো বাধা নেই, বাধা সরকার। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। দেশনেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি যদি পূরণ না হয়, তাহলে সরকারের পতনের আন্দোলনে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।
মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ৭৬ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী অনেক দিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ দফা আবেদন করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে।