এবার হজের মূল আনুষ্ঠানিক পর্বে মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া হাজার হাজার হাজিকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার পাঁচ দিন মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় হাজীদের জন্য যানবাহন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু ও খাবার সরবরাহের কথা থাকলেও ৫০ শতাংশের ভাগ্যে ন্যূনতম সেবাও মেলেনি। বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত থাকলেও এর দায় নিচ্ছে না এজেন্সিগুলো। তাদের দাবি, এর দায় সৌদি কর্তৃপক্ষের।
আরাফাতের দিন পরিবহন না পেয়ে বহু সংখ্যক হাজীকে মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। যারা বাস পেয়েছেন, তাদের যাত্রাও সুখকর হয়নি। কারণ আসন সংখ্যার চেয়ে তিনগুণ হাজীকে একই বাসে ঠেসে নেওয়া হয়। অনেকেরই তাঁবুতে ঠাঁই হয়নি। কারো কারো ভাগ্যে তাঁবু জুটলেও এসি না থাকায় প্রচণ্ড গরমে নিদারুণ কষ্ট করতে হয়। বহু এজেন্সির যাত্রীর কপালে খাবার জোটেনি। খাবার চাইতে গিয়ে হাজীদের অনেকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে হজ এজেন্সিগুলোর দাবি, অনেক সময় মোয়াল্লেমের চরম উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে এমন বিপর্যয় ঘটে। আর যাত্রীরা বলছেন, এমন বিপদের সময় এজেন্সির গাইড কিংবা সংশ্লিষ্ট কাউকে তারা খুঁজে পাননি। বাংলাদেশ হজ মেডিকেল সেন্টারের সামনে ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন ৭০ ও ৬০ বছরের দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও মিনিট খানেক পরপর মাটিতে বসে পড়ছিলেন। তারা জানান, ৮ জিলহজ রাতে তারা বাসে জায়গা পাননি। এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা হেঁটে আরাফাত ময়দানে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন সব তাঁবু মানুষে পরিপূর্ণ। অগত্যা ফেরার পথে আরাফাত ময়দান থেকে হেঁটে মিনায় গিয়ে শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের পর আবার হেঁটে তাঁবুতে ফিরে আসেন।
এবার বাংলাদেশের ৫২৮টি বেসরকারি হজ এজেন্সির মধ্যে ২০০ এজেন্সি ২০০ থেকে ৩০০ যাত্রীর জন্য ১টি এবং অপর ২০০ এজেন্সি প্রতি ১০০ জনের জন্য ১টি বাস বরাদ্দ দেয়। ১৩৪ নম্বর তাঁবুর এক হাজী জানান, মিনায় তাদের তাঁবুতে সারাদিন এসি নষ্ট থাকায় প্রচণ্ড গরমে থাকতে হয়েছে। ১০৫ নম্বর তাঁবুতে খাবার ছিল না। দুপুরে চাইতে গেলে মোয়াল্লেম হাজীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। এমনকি কয়েকজন হাজীকে মারধরও করা হয়। তাদের অভিযোগ, কমপক্ষে ৩০০ এজেন্সির হাজীরা শুধু ভাত আর ডাল খেয়ে ছিলেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) দুজন কর্মকর্তা জানান, তারা হাজীদের ভোগান্তির বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, ‘হজের কার্যক্রম বাংলাদেশ ও সৌদি আরব দুটি অংশে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ অংশে এ বছর শতভাগ সাফল্য এসেছে। ভিসা ও বিমান টিকেট নিয়ে নানা অনিশ্চয়তার কথা বলা হলেও এক লাখ ২৭ হাজারেও বেশি হজযাত্রী হজে এসেছেন। তবে সৌদি আরব অংশের কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকার ও হাবের কিছু করার থাকে না। মাত্র হজ শেষ হলো। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এ অংশের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে মন্তব্য করতে হবে।’
মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় এজেন্সি এবং তাদের গাইডরা পরিবহন, তাঁবু নিশ্চিত ও খাবার সরবরাহে চরম অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হজের সব কার্যক্রম ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বেশ কয়েকটা ধাপ পেরিয়ে (মক্তব ও মোয়াল্লেম নিয়োগ) মক্কা ও মদিনার বাড়িভাড়া, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে তাঁবু স্থাপন এবং খাবার সরবরাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে ফরম পূরণ সাপেক্ষে বারকোড বা ভিসা পেতে হয়। একজন হজযাত্রী সৌদি আরবে পা রাখার পর থেকে তার সবধরনের সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এককভাবে সৌদি কর্তৃপক্ষের। এ কারণে চাইলেই বাংলাদেশের মতো স্ব-উদ্যোগে কিছু করার থাকে না।’ মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় বিপুলসংখ্যক হাজীর বাস, তাঁবু ও খাবারের সমস্যা সম্পর্কে অভিযোগ হাবের নেতারা জানেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।