আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায় ক্যাথরিন হাডসন নামে এক ছোট্ট মেয়ে বড় বোনের ক্যাসেট প্লেয়ার চুরি করে নানা ধরনের গান শুনছে আর গলা মেলাচ্ছে। হয়তো সব পরিবারেই এমনটা হয়। কিন্তু সংগীতের প্রতি এমন ভালোবাসার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন মেয়েটির মা-বাবা। তাকে ভর্তি করে দিলেন সান্তা বারবারার ‘মিউজিক একাডেমি অব দ্য ওয়েস্ট’-এ। তখনকার সেই ছোট্ট ক্যাথেরিন এলিজাবেথ আজকের কেটি পেরি। সংগীতের প্রতি এমন তীব্র অনুরাগ কেটি পেরির শৈশব থেকে ছিল বটে। কিন্তু পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল খুবই কম। যেন কোনো রকম জিইডি পরীক্ষা শেষ করে হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত সংগীতচর্চা ও পরিবেশনার গণ্ডি ছিল শুধু গির্জা, স্কুল আর ক্যাম্প। শুধু গান নয়, নাচের প্রতি আগ্রহ থাকায় তখন থেকেই গানের পাশাপাশি নাচটাও আয়ত্ত করেন।
ওই বয়সেই কেটির প্রথম অ্যালবাম ‘কেটি হাডসন’ প্রকাশ হয়। যদিও গসপেল-রক ধারা এই অ্যালবামটি ব্যর্থ হয়। কিন্তু হাল ছাড়েননি পেরি। দ্বিতীয় অ্যালবাম প্রকাশের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সাত বছর।
এই দীর্ঘ কঠোর সংগ্রামের পর ২০০৮ সালে বাজারে আসে ‘ওয়ান অব দ্য বয়েজ’। এটি বিলবোর্ডে নবম স্থানে জায়গা করে নেয় এবং ‘রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ থেকে অ্যালবামটি প্লাটিনাম খেতাব লাভ করে। এরপরের গল্পটা সবারই জানা। একের পর এক সাফল্য কীভাবে মুঠোবন্দি করেছেন, তা কেটির ক্যারিয়ারের গ্রাফ দেখলেই বোঝা যায়। ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর কেটি পেরি বিশ্বের সংগীতজগতের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী তারকা।
তবে এত সফলতার মাঝেও কেটির সময়টা বেশ কিছুদিন খারাপ গিয়েছিল। বিশেষ করে ব্যক্তিজীবন নিয়ে তিনি ছিলেন বেশ হতাশ। স্বামী রাসেল ব্র্যান্ডের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি অনেকটাই মুষড়ে পড়েন। হতাশা কাটাতেই বেছে নেন ‘ট্রয়’ ছবির তারকা অরল্যান্ডো ব্লুমকে। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কেটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডের পার্টিতে হীরার আংটি পরিয়ে দেন ‘ট্রয়’ ছবির তারকা ব্লুম। বর্তমানে সুখে আছেন কেটি, মনের সুখে গান লিখছেন, গাইছেন। কেটি পেরি তার হতাশার সময়গুলোর কথা বলতে গিয়ে জানান, তখন তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। তখন সারা দিন ঘরের দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে থাকতেন। বললেন, ‘আমি থেরাপি নিয়েছি। লড়াই করেছি। আর সত্যিকারের জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পেয়েছি।’
অরল্যান্ডো দুর্দান্ত একজন মানুষ। ও আমাকে ধরে রাখে, যাতে আমি পড়ে না যাই। ও হয়তো শিল্পী কেটি পেরির সেরা ভক্ত নয়, কিন্তু ও ক্যাথরিন হাডসনের (কেটি পেরির আসল নাম) সবচেয়ে বড় ভক্ত।’
কেটি পেরি নারীবাদী হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ‘টাইম ফর চেঞ্জ’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তিনি নারীর ক্ষমতায়ন চলমান করার জন্য উৎসাহ জোগান। এ ছাড়া তিনি আমেরিকায় বিনামূল্যে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কেটি পেরি বিভিন্ন চ্যারিটেবল সংস্থাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। ক্যানসার ও এইচআইভি-এইডস রোগীদের চিকিৎসার জন্য, নারীদের স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ব্রেস্ট ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। বাল্টিমোর, ম্যারিল্যান্ডের যুবকদের জন্য তিনি বয়েজ হোপ এবং গার্লস হোপ ফাউন্ডেশন শেল্টার নির্মাণ করেন। মাদাগাস্কারে শিশুশিক্ষা এবং পুষ্টি নিয়ে তিনি ইউনিসেফের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেন। এই সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বের নির্যাতিত শিশুদের উন্নত জীবন ও শিক্ষার জন্য তিনি নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা করছেন।
এদিকে কেটি এবার পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় নারী পাচার সমস্যার বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান চালাবেন। সম্প্রতি ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের দূত নির্বাচিত হয়েছেন এই সংগীত তারকা। শুভেচ্ছাদূত নির্বাচিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত কেটি বলেন, ‘শিশু পাচার রুখতে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের নতুন পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে আমি মুগ্ধ। সেই সঙ্গে এমন এক অভিনব উদ্যোগের অংশীদার হওয়ার সুযোগ পেয়ে অভিভূতও বটে! শিশু পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ রুখতে পারার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান বলেও মনে করছি।’
এদিকে কেটি পেরি জানান মা হতে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি কেটির ‘নেভার ওর্ন হোয়াইট’-এর মিউজিক ভিডিওতে তাকে গর্ভবতী অবস্থায় দেখা যায়। এরপর এক টুইটার বার্তায় মাতৃত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেটি নিজেই। এর আগে কেটি ইনস্টাগ্রামে সন্তানসম্ভবা হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, তার অ্যালবাম মুক্তির সময় নবজাতক আলোর মুখ দেখবে।
কেটি পেরি বলেন, ‘সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সময় গোপন রাখতে পেরেছি আমার মা হওয়ার খবর। আমি জানাতে দেরি করলেই এরই মধ্যে আপনারা জেনেছেন খুশির খবরটি। এই গ্রীষ্মে অনেক কিছু হতে যাচ্ছে। আমরা অনেক খুশি।’ এবার দ্বিতীয় স্বামীর সন্তানের মা হতে যাচ্ছেন কেটি।