হজ কার ওপর ফরজ এবং কখন আদায় করতে হয়

হজ অনাদায়ী রেখে মৃত্যুবরণ করলে মারাত্মক গুনাহ হবে

সংরক্ষিত ছবি

ধর্ম

হজ কার ওপর ফরজ এবং কখন আদায় করতে হয়

  • প্রকাশিত ১ অগাস্ট, ২০১৮

হজ— ইসলামের মহান একটি ইবাদত। আল্লাহতায়ালা কোরআনে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছেন, সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার মহান এ ইবাদতটি পালন করা ফরজ। ইরশাদ হয়েছে, মানুষের মধ্যে যে ব্যক্তি (ঈমানদার) কাবাঘর পৌঁছতে সক্ষম, তার ওপর আল্লাহর প্রাপ্য হচ্ছে— সে যেন হজ করে। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত-৯৬) অসংখ্য ফজিলত, সওয়াব, রহমত, বরকত ও মর্যাদায় পরিপূর্ণ ইবাদত পবিত্র হজ। যার জীবনে অন্তত একবার হজ পালন নসিব হয়েছে সে সৌভাগ্যবান। মুমিনের জীবনে মহান সব ইবাদতের অন্যতম একটি হলো পবিত্র হজব্রত। হজের মাধ্যমে মুমিনদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। পবিত্র এ আমল-ইবাদতের পরকালীন বা ধর্মীয় উপকারিতা তো আছেই, পার্থিব উপকারও অনেক। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, হজ ও ওমরা পালন করলে দরিদ্রতা ও অভাবগ্রস্ততা দূর হয়ে যায়। হজের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো জান্নাত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, গুনাহমুক্ত গ্রহণযোগ্য হজের একমাত্র বিনিময় জান্নাত। (বুখারি ও মুসলিম)

মকবুল একটি হজ হাজিকে গুনাহমুক্ত পবিত্র নতুন জীবন এনে দেয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ করল এবং কোনো অশ্লীল ও মন্দ কাজ করল না— সে এমন নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরল, যেমন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছিল। (বুখারি ও মুসলিম) সব বিবেচনায় হজ অনন্য এক ইবাদত। বান্দাকে সর্বোচ্চ মানের মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সর্বোচ্চ সওয়াবের অধিকারী বানাতে হজের সমকক্ষ অন্য কিছু নেই। তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করা বা বিলম্ব করা নির্বুদ্ধিতা বৈ অন্য কিছু নয়। পবিত্র হজ নিয়ে বিশেষ সংখ্যাটি পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন মিরাজ রহমান। সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন ও ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ-

 

হজ কার ওপর ফরজ এবং কখন আদায় করতে হয়

 

মনযূরুল হক

হজ কার ওপর ফরজ : হজ এমন একটি ইবাদত যা পবিত্রভূমি সৌদি আরবে অবস্থিত কাবাঘর, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় গিয়ে আদায় করতে হয়। সবার ওপর হজ ফরজ নয়, কিছু শর্তসাপেক্ষে মুসলিম বান্দার ওপর হজ ফরজ। শর্তগুলো হলো— ১. মুসলমান হওয়া; ২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া; ৩. সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কেউ যদি হজ করে তাহলে তার হজ হবে এবং সওয়াবও পাবে। তবে পরবর্তীকালে বালেগ হওয়ার পর সামর্থ্য থাকলে ফরজ হজ আদায় করতে হবে; ৪. স্বাধীন হওয়া; ৫. হজ আদায় করার সামর্থ্য থাকা। সামর্থ্য তিন ধরনের- ক. দৈহিক সামর্থ্য অর্থাৎ কাবাঘর পর্যন্ত সফর করার শারীরিক যোগ্যতা থাকা, খ. আর্থিক সামর্থ্য অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করে কোনো ব্যক্তির কাছে হজে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার ওপর হজ ফরজ, গ. নিরাপত্তা। যাতায়াতের পথে নিরাপদ থাকা এবং রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকা; ৬. হজ ফরজ হওয়ার জ্ঞান হওয়া; ৭. হজের সময় বা মৌসুম হওয়া।

হজের মৌসুম বলতে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনকে বোঝায় অথবা এমন সময়কে বোঝায় যখন থেকে রাষ্ট্রে হজের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কোনো ব্যক্তির জীবনে কোনো একটি বছরে উপর্যুক্ত শর্তগুলোর সমন্বয় ঘটলে, তার ওপর হজ ফরজ। সে যদি ওই বছর হজ আদায় না করে এবং পরবর্তীকালে সামর্থ্য হারিয়েও ফেলে তবু সে ফরজের দায় থেকে মুক্ত হবে না। নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরো ২টি শর্ত রয়েছে- ১. নারীদের সঙ্গে স্বামী অথবা এমন কোনো মাহরাম পুরুষ থাকা, যার সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে বিবাহ নিষিদ্ধ। কোনো নারী যদি মাহরাম-সঙ্গী ছাড়া হজ করে, তার হজ আদায় হবে কিন্তু মাহরাম ছাড়া সফরজনিত কারণে গুনাহ হবে। ২. স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে বা তালাকের কারণে ইদ্দত পালনকালে নারীরা হজে গমন করবেন না।

হজ কখন আদায় করতে হয় : কোনো ব্যক্তি যখন হজ করার সামর্থ্য লাভ করেন, তখন ওই বছরই হজ আদায় করা কর্তব্য। দেরি করে পরবর্তী কোনো বছরে আদায় করলেও হজ হয়ে যাবে; কিন্তু অহেতুক দেরি করা অনুচিত। দেরি করার কারণে গুনাহগার হবেন। এ ছাড়া হজ অনাদায়ী রেখে মৃত্যুবরণ করলে মারাত্মক গুনাহ হবে। হজ আদায়ের আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে তার জীবদ্দশায়ই বদলি হজ করানো উচিত। আর এ সুযোগও না পেলে ওয়ারিশদের উচিত উক্ত ব্যক্তির বদলি হজ আদায় করে তাকে দায়মুক্ত করা। রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরে পৌঁছার জন্য পাথেয় ও বাহন পেল অথচ হজ আদায় করল না, সে ব্যক্তি ইহুদি অথবা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করুক তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। (তিরমিজি) 

লেখক : হেড অব কনটেন্ট, দ্য সুলতান

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads