বাংলাদেশের রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলার উপ-শহর বাংলাবাজারে প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বাধীনতা জাদুঘর । রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর তিনতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এ জাদুঘর উদ্বোধন করেন। জাদুঘরের তিনতলার নিচতলায় লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম এবং প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকে সাজানো হয়েছে। জাদুঘরের দেয়ালে সাদা-কালো ছবিতে মূর্ত হয়ে আছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ডায়াসে তার চশমা, কলরেডির মাইক আর সামনে লাখ লাখ মানুষ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ভাষণটি তিনি দিচ্ছেন (৭ মার্চের ভাষণ)। বিশাল ফ্রেমে দেয়ালজুড়ে বাঁধানো বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছবি। এদিক-ওদিককার দেয়ালে বিশ্বের বিখ্যাত নেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কত কত ছবি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিনকার সেই আবেগঘন ছবি জীবন্ত হয়ে আছে ফ্রেমের ভেতর। এসব ছবির দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায় না। বঙ্গবন্ধুর চেয়ে সুপুরুষ কোনো বাঙালি কখনো জন্মায়নি, আর জন্মাবেও না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলেন। বাংলার মাটিতে পা রেখে পরিবার হারানোর কষ্টে তিনি মুহ্যমান। আকাশের দিকে দুই হাত তোলা তার সেই বেদনার্ত মুখের ছবি দেখে কার না বুক ফাটে! ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ছবি। বঙ্গবন্ধুকন্যার স্তম্ভিত মুখ। আরো কত দিনকার কত মুহূর্তের ছবি। দেয়ালের পর দেয়াল ভরে আছে ছবিতে। কোথাও পাইপ ঠোঁটে সেই মহান পুরুষ, কোথাও তার সুযোগ্য কন্যার হাসিমুখ। বঙ্গবন্ধুকে দুই হাতে ধরে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন হাস্যোজ্জ্বল তরুণ তোফায়েল আহমেদ। ঊনসত্তর সালের ছবি। এ ধরনের বহু আনন্দ-বেদনার ছবিতে ভরে আছে তোফায়েল আহমেদের সেই স্বপ্নের জাদুঘর। বাঙালি জাতির দীর্ঘকালের আন্দোলন-সংগ্রাম গৌরব আর অর্জনের ইতিহাস তিনতলার মাঝারি সাইজের ভবনটিতে স্থির হয়ে আছে। স্বাধীনতা জাদুঘরে অডিটোরিয়ামের বিশাল স্ক্রিনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভিডিও দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, গণমাধ্যমের সম্পাদক, শীর্ষ কর্মকর্তাসহ দেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এই জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন। সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় শিল্প, বাণিজ্য ও বেসামরিক বিমানমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন। যিনি একবার পরিদর্শন করেছেন, তিনিই হারিয়ে গেছেন অন্য এক জগতে। প্রত্যেকর স্মৃতিতে অমর অক্ষয় হয়ে থাকবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার ইতিহাস। স্বাধীনতা জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করে ঊনসত্তরের মহানায়ক ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন।