সেতুর যেসব কাজ বাকি

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

সেতুর যেসব কাজ বাকি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর, ২০২০

মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া, মাদারীপুর জেলার শিবচর ও শরীয়তপুর জেলার জাজিরায় চলছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের উৎসব। দিনরাত কাজ চলছে এ তিন জেলাবেষ্টিত পদ্মা নদীর পাড়ে। পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। সেতু নির্মাণের সব কাজ তদারকি করছে সেনাবাহিনী। সরকারের পরিকল্পনামাফিক ২০২২ সালের মাঝামাঝি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতু। এ সেতু নিয়ে দেশের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।

এটি বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে এ সেতুর মাধ্যমে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। এটির নাম পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে, যা বিশ্বে প্রথম। প্রকল্পে মোট ব্যয় (মূল সেতুতে) ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ ছিল ৫২৪ কোটি টাকা। প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি এটি নির্মাণ করছে। সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা। রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে। সেতুর প্রস্থ ৭২ ফুট। এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটর। সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার। নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।

প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ। সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি। পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা রয়েছে ৬০ ফুট। সেতুর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট এবং মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হয়েছে ৬টি। তবে মাটি জটিলতার কারণে ২২টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ৭টি করে। মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৮৬টি। নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। সেতুটি নির্মিত হলে দেশের মোট জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।

গতকাল ৪১তম স্প্যান বসার মধ্য দিয়ে শেষ হলো পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর কাজ। এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে যা সম্পন্ন হতে লাগবে অন্তত আরো এক বছর- এমনটাই জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের। বলেন, ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে ১ হাজার ২৮৫টি এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্লাবের মধ্যে ১ হাজার ৯৩০টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার-টি গার্ডারের মধ্যে ৩১০টি স্থাপন করা হয়েছে। বাকি রোডওয়ে স্লাব, রেলওয়ে স্লাব ও সুপার-টি গার্ডার বসাতে প্রায় আট মাস সময় লাগবে। এরপর স্লাবের ওপর হবে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। এছাড়া ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজও বাকি।

ভাঙনের কারণে পদ্মা সেতুর ১২৬টি রোডওয়ে স্লাব ও ১৯২টি রেলওয়ে স্লাব নদীতে তলিয়ে যায়। সেগুলো নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। রেলওয়ে গার্ডার লুক্সেমবার্গ থেকে আনা হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ সেগুলো কনস্ট্রাকশন সাইটে চলে আসার কথা। এসব কাজ ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ লাইন স্থাপনের কাজ বাকি আছে। সব মিলিয়ে বছরখানেক পর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে পদ্মা সেতু। গত ৩ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯১ ভাগ।

এদিকে পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ দশমিক ৫০ ভাগ। সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (নদীশাসন) মো. শরফুল ইসলাম সরকার জানান, দক্ষিণপ্রান্তে মোট ১২ কিলোমিটার নদীশাসন কাজ হবে। এর মধ্যে ৮ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী এলাকায় তিন কিলোমিটার নদীশাসন কাজ বাকি আছে এবং উজানে আরো এক কিলোমিটার কাজ চলমান আছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী বর্ষার আগে নদীশাসনের প্রধান কাজ, যেমন− ড্রেজিং, বালুর বস্তা ফেলা, সিসি ব্লক ফেলা ইত্যাদি কাজ শেষ করা। যদি বর্ষার আগে এসব কাজ শেষ করা যায় তাহলে বর্ষা মৌসুমে পাথর ফেলা (ডাম্পিং) যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads