সেকেন্ডের এক ট্রিলিয়ন ভাগ সময়ে  লাখ ডিগ্রিতে উত্তপ্ত করে পানি

সেকেন্ডের এক ট্রিলিয়ন ভাগ সময়ে লাখ ডিগ্রিতে উত্তপ্ত করে পানি

কাল্পনিক ছবি

তথ্যপ্রযুক্তি

দ্রুততম ওয়াটার হিটার

সেকেন্ডের এক ট্রিলিয়ন ভাগ সময়ে লাখ ডিগ্রিতে উত্তপ্ত করে পানি

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৯ মে, ২০১৮

প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক কাজই এখন দ্রুত হয়ে যায়। সাত দিনের পথ পাড়ি দেওয়া যায় সাত মিনিটে, চুলো না জ্বালিয়ে মিনিটের মধ্যেই ফোটানো যায় পানযোগ্য তরল পদার্থ। পানির কথাই ধরা যাক। হঠাৎ করেই গরম পানির বিশেষ দরকার পড়লে এখন ভালোমানের ওয়াটার হিটার দিয়ে মিনিটের মধ্যেই এক মগ গরম পানি পাওয়া যায়। আবার মাইক্রোওভেনেও দ্রুত প্রায় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে গরম করা পানি পাওয়া যায়।

কিন্তু গবেষকরা সম্প্রতি এমন একটি ওয়াটার হিটার তৈরি করেছেন, যা দিয়ে সেকেন্ডের এক লাখ কোটি ভাগের এক ভাগ সময়ে এক লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করা যাবে কক্ষ তাপমাত্রার পানিকে।

সায়েন্স ডেইলিতে প্রকাশিত এই আবিষ্কার সংক্রান্ত এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা পানি গরম করতে এক্সরে (রঞ্জনরশ্মি) ব্যবহার করতে গিয়ে দেখেন, পানির মধ্যে রঞ্জনরশ্মি চালনা করা মাত্রই পানির তাপমাত্রা ১ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে।

তবে এই ১ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে ঠিক কত সময় লেগেছে সেটা নিরূপণ করতে গিয়ে তারা অবাক হয়ে যান। তারা দেখেন, মাত্র এক পিকো সেকেন্ড বা এক সেকেন্ডের এক লাখ কোটি ভাগের এক ভাগ সময়ই পানি লাখ ডিগ্রিতে উত্তপ্ত হয়েছে।

অধ্যাপক কার্ল ক্যালেম্যানের নেতৃত্বে জার্মানির ইলেকট্রোনেন সিনক্রোট্রোনের সেন্ট্রার ফর ফ্রি-ইলেকট্রোন লেজার সায়েন্স এবং সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক সম্প্রতি পানিকে দ্রুততম সময়ে উত্তপ্ত করার লেজারের এই ক্ষমতাটি আবিষ্কার করেন। গত সোমবার সেটি প্রসেডিং অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণাকালে পানি এমন একটি চরম অবস্থায় পৌঁছায় যা পানির বৈশিষ্ট্য নিয়ে ভবিষ্যতের কোনো গবেষণায় সহায়তা করবে।

কার্ল ক্যালেম্যান বলেন, এটি যদিও পানি গরম করার স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়া নয়। সাধারণত আমরা যখন পানিকে জ্বাল দিই বা উত্তপ্ত করি তখন পানির অণুর মধ্যে তীব্র কাঁপন তৈরি হয়। পানির এই আণবিক স্তরে তাপমাত্রা যত বাড়ে অণুর ছুটোছুটি করার প্রবণতা ততটাই বাড়ে।

তবে এক্সরের মাধ্যমে পানি উত্তপ্ত করার প্রক্রিয়া একটি ভিন্নভাবে কাজ করে। কার্ল ক্যালেম্যানের ভাষায়, শক্তিশালী এক্সরে পানির অণুকে আঘাত করে তার থেকে ইলেকট্রন অপসারণ করে ফেলে। ফলে অণুগুলোর মধ্যকার আণবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর এ কারণেই পানির অণুগুলো একটি শক্তিশালী বিতাড়নশক্তি অনুভব করে এবং এলোমেলো ছুটোছুটি শুরু করে। এরপর মাত্র ৭৪ ফেমটোসেকেন্ড বা এক সেকেন্ডের এক বিলিয়ন ভাগের ৭৫ ভাগ সময়ের মধ্যে পানি তরল থেকে প্লাজমা অবস্থায় চলে গেছে।

ক্যালেম্যান বলেন, পানি যখন তরল অবস্থা থেকে প্লাজমা অবস্থায় যায় তখন পানির ঘনত্ব তরল অবস্থার মতোই থাকে। মনে হয় পানির অণুগুলোর নড়াচড়া করারও সময় নেই। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই অবস্থার কোনো কিছুই পৃথিবীতে নেই। তবে সূর্য আর বৃহস্পতি গ্রহের গ্যাসের ঘনত্ব এমন হতে পারে। তিনি বলেন, প্লাজমা অবস্থার যে পানি তার তাপমাত্রা পৃথিবীর কেন্দ্রের চেয়েও বেশি।

গবেষকরা আশা করছেন, তাদের এই আবিষ্কার যেকোনো ধরনের তরলের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণায় সহায়তা করবে। শুধু তাই নয়, পানিকে অনেক সহজেই জীবাণুুমুক্তও করা যাবে ভবিষ্যতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads