সৃজনশীল পেশায় ক্যারিয়ার

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

সৃজনশীল পেশায় ক্যারিয়ার

  • প্রকাশিত ২৬ নভেম্বর, ২০১৮

এমন একটি সময় ছিল যখন ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো অবকাঠামো মানা হতো না। এখন সময় বদলেছে। আর্কিটেক্ট ও সরকারের অনুমোদন নিয়ে আবাসন তৈরি করতে হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখন বাংলাদেশেও আর্কিটেক্টরা ভবনের ভেতর-বাইরের নকশা থেকে শুরু করে পুরো কাজের নেতৃত্ব দেন। আর তাই দিনে দিনে আর্কিটেক্টদের চাহিদা বাড়ছে। কারণ দেশে মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উন্নত আবাসন প্রকল্প, আধুনিক বিতান, অফিস আদালতের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবাই এখন চায় সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশে থাকতে। সে কারণে আর্কিটেকচারের বিকল্প কিছুই নেই। দেশের বাইরেও আর্কিটেক্ট বা স্থাপত্য শিল্পীদের চাহিদা বেশি।

আর্কিটেক্ট : আর্কিটেক্ট একটি সৃজনশীল পেশা। এ পেশায় জড়িয়ে নিজেকে একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় খুব সহজেই। যদি চাকরি করার ইচ্ছা না থাকে, তবে একটি ফার্ম চালু করে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। একজন আর্কিটেক্টর শুধু কোনো স্থাপনার সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করেন না, বরং বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার নিরিখে স্থাপনা তৈরিতে প্রয়াসী হন। বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত সব ভবন আর স্থাপনা তৈরি করে অমর হয়ে রয়েছেন অনেক স্থাপত্যবিদই। তারা সবাই টিকে আছেন তাদের সৃজনশীল মেধা দিয়েই। যেমন আমাদের জাতীয় সংসদ ভবনের কথাই ধরুন। এর স্থপতি ভিনদেশি লুই কান তার সৃষ্টিশীলতার মহিমায় এখনো আমাদের কত আপন হয়ে আছেন। এবার আপনার পালা। দেখিয়ে দিন আপনার মেধা। 

কেন আর্কিটেক্ট : কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে প্রয়োজন নকশার। আর সে নকশা করেন স্থপতি বা আর্কিটেক্ট। একজন স্থপতিই নিশ্চিত করেন স্থাপনাটি পরিবেশসম্মত, ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ কি না। আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থপনার নকশা সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হবে।

কাজের সুযোগ : দেশের জনসংখ্যার চাপ সামলাতে সফলভাবে পরিকল্পনামাফিক নগরায়ণ ও বিশেষ সিটি স্থাপন এখন আর্কিটেকচারাল কোম্পানিগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। আবাসন বা স্থাপনার নকশা, স্থায়িত্ব, এবং নান্দনিক করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোক্তারা আর্কিটেক্ট বিষয়ের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক, তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক পড়াশোনা জানা লোকবলের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শহরগুলোয়ও বিল্ডিং এবং অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের সহায়তা নিতে আইনগত বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে। বাংলাদেশের বহু আর্কিটেকচারাল কনসালট্যান্সি ফার্ম, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও সরকারি স্থাপত্য অধিদফতর আছে, যাতে কাজ করার মতো বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব রয়েছে। কাজের সুযোগ আছে বিদেশেও। যেমন— উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ৩০-৪০ শতাংশ আর্কিটেক্টই বাংলাদেশি। আর্কিটেকচার থেকে পাস করে শুধু বিল্ডিং ডিজাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে না চাইলে বিভিন্ন থ্রিডি অ্যানিমেশন, থ্রিডি মডেলিং, অটোক্যাড ড্রয়িং বা গ্রাফিক্সের কাজ করে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : প্রথমত গণিতসহ বিজ্ঞান শাখায় সব বিষয়ে ভালো করতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ভালো থাকতে হবে। অবশ্যই কম্পিউটার ব্যবহার এবং চিত্রাঙ্কনে পারদর্শী হতে হবে। যেকোনো ছবি আঁকার মতো যোগ্যতা ছাড়া আর্কিটেকচারে ভালো করা অনেকটাই অসম্ভব। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

লেখাপড়া শেষে কাজের সম্পর্কে আর্কিটেক্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আর্কিটেক্ট তৌফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানি, আধুনিক ইন্ডাস্ট্রি, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসহ ফ্রিল্যান্সিং কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে আর্কিটেক্টদের চাহিদা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ বুঝত না আর্কিটেকচাররা আসলে কী করে? তাদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেকচারের মথ্যে পার্থক্য সম্পর্কে ধারণা ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছে সবাই। কোনো স্থাপনা নির্মাণের জন্য যেমন পরিকল্পনা দরকার তেমনি নির্মাণের পরে সেটি সুন্দর মতো সাজানোটাও জরুরি। আধুনিকতা এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে বর্তমানে প্রায় সবাই আর্কিটেকচারদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এই পেশায় ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আর্কিটেক ও ডিজাইন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিজ্ঞাপন অনলাইনে দিয়ে থাকে। এসব কাজ করে প্রচুর অর্থ আয় করছে অনেক আর্কিটেক্ট।

একজন সফল আর্কিটেক্ট হতে চাইলে যে গুণাবলি থাকা দরকার, সে সম্পর্কে ডিজাইন সোর্সে সিইও এবং আর্কিটেক্ট শাহরিয়ার আলম জানান, একজন ভালো আর্কিটেক্ট হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে সৃজনশীল হওয়া। সব কাজের মূল মন্ত্র হচ্ছে ইচ্ছা, আগ্রহ, ধৈর্য ও পরিশ্রম। কাজের প্রতি অলসভাব আনা যাবে না। দেশ-বিদেশের বড় বড় স্থাপনার নকশা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণের উদ্যমী হতে না পারলে এই পেশায় সফল হওয়া খুবই কঠিন। নতুন আইডিয়াকে গ্রহণ করার সক্ষমতা থাকতে হবে। কাজের মাধ্যমে নিজের প্রতিভাকে তুলে ধরতে হবে। যেহেতু এই পেশাটা মানুষের কাছে নতুন, তাই সচেতনতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রতিনিয়ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী হলে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া খুব সহজ হবে। একজন আর্কিটেক্টের আয়ের পরিমাণ সম্পর্কে তিনি জানান, নতুন একজন আর্কিটেক্ট মোটামুটি ২০-২৫ হাজার টাকায় তার কর্মজীবন শুরু করতে পারে। তবে ছয় মাসের মধ্যে সে যদি তার কাজের দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হয়, তাহলে তার আয়ের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। একজন দক্ষ আর্কিটেক্ট মাসে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করে। 

 

সায়মা সুলতানা মুন

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads