সুবর্ণা মোর্শেদার ‘অন্বেষণ’

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

সুবর্ণা মোর্শেদার ‘অন্বেষণ’

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি, ২০২২

রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ এ অবস্থিত ইএমকে সেন্টারে হয়ে গেল শিল্পী সুবর্ণা মোর্শেদার একক চিত্র প্রদর্শনী ‘অন্বেষণ’। প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন প্রফেসর জামাল আহমেদ, প্রফেসর আনিসুজ্জামান ও মনের বন্ধুর তাওহিদা শিরোপা। লিথোগ্রাফ, সায়ানোটাইপ, পেন্সিল স্কেচ, জলরং- বিভিন্ন মাধ্যমে করা এই শিল্পীর মোট ৪২টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনী শেষ হবে আজ।  শো-টি কিউরেট করেন দৃকের কিউরেটর রেজাউর রহমান।

নিজেকে খোঁজার তাগিদ সবসময়ই অনুভব করেন সুবর্ণা্ মোর্শেদা। এই খোঁজ হলো আত্ম-অন্বেষণ। শিল্পী বলেন, ‘অন্বেষণ মানে তো খোঁজ। আমার কাছে সবসময় মনে হয়, নিজেকে খোঁজার চেয়ে কঠিন কিছু নাই। গত দুই বছরে সেই খোঁজার তাগিদ আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। এই সময়ে অন্যদের সঙ্গে যখন কথা বলেছি, তার মাঝেও নিজেকেই খোঁজার চেষ্টা চলতো। লকডাউনের বেশ আগে থেকেই নিজেকে অনেক বেশি আইসোলেশনে নিয়ে যাই। একটা নিরঙ্কুশ একাকীত্বের মধ্যে চলে আত্ম-অনুসন্ধানের কাজ। লকডাউন আমার জন্য নতুন কিছু ছিল না। ’

২০১৯-এর একটা সময় অন্ধকারে ডুবে যান সুবর্ণা মোর্শেদা। স্বভাবগত দিক থেকে তিনি রঙিন মানুষ হয়েও জীবন হয়ে পড়ে সম্পূর্ণ সাদা-কালো। আর এ সময়টাতেই অনেকগুলো কাজ করে ফেলেন তিনি। কখনো লিথোগ্রাফ, কখনো পেন্সিল স্কেচ আর কাগজে সেলাই করে করা কাজ। এই কাজগুলোই সুবর্ণাকে সেই গভীর অন্ধকারেও বেঁচে থাকার প্রেরণা যুগিয়েছে।

এই শিল্পী বলেন, ‘কাগজে সেলাই করে শিল্পকর্ম নির্মাণের একটা আলাদা আনন্দ আছে। সেটা হলো স্পর্শের আনন্দ। এই স্পর্শকে কেমন করে দেখাবো! সেলাইয়ের উঁচু-নিচু অংশগুলোকে আমি বলি স্পর্শের প্রতীক। এর মধ্য দিয়ে স্পর্শের অনুভূতিকে অন্যের মনে সঞ্চার করা যায়। বড় হওয়ার পর, করোনার এই সময়ে জীবনে এই প্রথম আমি মায়ের সাথে বাবার সাথে এতো দীর্ঘ সময় কাটানোর অবকাশ পেয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে আমি গন্ধ, স্পর্শ নিয়ে কাজ করি। এবার মায়ের গন্ধের সঙ্গে যোগ হলো মায়ের বাগানের গন্ধ-স্পর্শ। গাছগুলোর পাতা যখন ঝরে পড়ে, সে-পাতার রং, শেইপকে আমার কাজের সঙ্গে সংযুক্ত করা আর স্পর্শগুলোকে ধরার জন্যই আমার কাগজে সেলাই করার কাজ। এরমধ্যেই হলো মায়ের করোনা। দীর্ঘ ১ মাস ধরে মায়ের সিরিয়াস কন্ডিশন । আমি বুঝতে পারতাম, গাছগুলোও মাকে খুব মিস করছে। এদিকে মা তো হসপিটালে অক্সিজেন নিতে ব্যস্ত! ২৪ ঘণ্টাই মায়ের সঙ্গে থাকি। তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়া- কখনো ভালো, কখনো মন্দ। অবশেষে মায়ের জয়ী হয়ে ঘরে ফেরা। তার সঙ্গে আবার তার গাছেদের সেই নিবিড় সম্পর্ক-গভীর বন্ধুত্ব! পুরো সময়টাই যেন কবিতার মতো, প্রেমের কবিতা! আমার সাদা-কালো ক্যানভাসে ছড়িয়ে দেওয়া রঙের মতো! অন্ধকারে অপরূপ আলোর মতো। আমার ছবিগুলো যেন জীবনের মতো! আমার জীবন যেন আমার ছবির মতো!’

সুবর্না মোর্শেদার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার সুবাদে ঢাকাতেও ছোট থেকে বড় হন। সেখানে ‘ইউনিভার্সিটি স্কুল এন্ড কলেজ’ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি, ২০০৭ সালে এইছএসসি পাস করেন। ঢাকার চারুকলায় ভর্তি হন ২০০৮ এ। সেখানে প্রিন্টমেকিং বিভাগে ভর্তি হন। মাস্টার্স পাস করেন ২০১৬ সালে। সুবর্না মোর্শেদার প্রথম প্রদর্শনী হয় ২০১৮ সালে, ধৃক গ্যালারিতে। দ্বিতীয় প্রদর্শনী হয় ২০১৯ সালে। ভারতে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads