দেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হলেও পর্যটক বৃদ্ধি ও সুন্দরবনের সুরক্ষায় কোনো সমন্বয় নেই। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে বন বিভাগের সঙ্গে ট্যুর অপারেটর, পর্যটন বোর্ড ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী ট্যুরিজম ফেস্টের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে রবীন্দ্র সরোবরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়শেন অব বাংলাদেশের (টোয়াব)-এর উপদেষ্টা ও বেঙ্গল ট্যুরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনে পর্যটকদের মধ্যে ২৫ শতাংশ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন। পর্যটকদের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষ সুন্দরবনে রাত্রী যাপন করেন। বাকি ৯০ শতাংশ দিনে ঘুরে ফিরে যান। পর্যটকদের ৭০ শতাংশ তরুণ। এই তরুণরাই সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এ বয়সীরা সহজে নিয়ম মানতে চান না। সুন্দরবনের সুরক্ষার জন্য পর্যটকদের সচেতন করা জরুরি। এ ছাড়া সুন্দরবন এলাকায় অনেক মৌসুমি ট্যুর অপারেটর রয়েছে যারা সুন্দরবন নিয়ে ভাবেন না, উপার্জন তাদের মূল উদ্দেশ্য। এসব ট্যুর অপারেটরকে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।’
বন বিভাগের সমালোচনা করে মাসুদ বলেন, ‘সুন্দরবনের পরিবেশ বিনষ্টের জন্য শুধু পর্যটকরা দায়ী নয়। সুন্দরবনের সুরক্ষার দায়িত্ব বন বিভাগের, কিন্তু তাদের জনবলের সঙ্কট রয়েছে। সুন্দরবনে গাছ কেটে, মাটি ভরাট করে র্যাব, কোস্টগার্ডের আউট পোস্ট বানানো হয়েছে, বন বিভাগ এসব বন্ধ করতে পারেনি। সুন্দরবনের ভেতরে মালবাহী জাহাজ যায়, নদী ভরাট হয় এসবও বন্ধ হয়নি।’
ট্যুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুল ইসলাম বুলু বলেন, ‘বন বিভাগ সুন্দরবনের পর্যটন নিয়ে নীতিমালা করছে। অথচ এই নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রজনন মৌসুম বলে তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক আগমন বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অথচ বন বিভাগের কাছে প্রাণীর কোন সময়ে প্রজনন মৌসুম সেই তথ্য নেই। সুন্দরবন সুরক্ষা ও পর্যটন- দুটোর জন্য সমন্বয় প্রয়োজন।’
বন অধিদফতরের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘সবাই সচেতন থাকলে সুন্দরবন সুরক্ষা সহজ হতো। সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থার কাজের মধ্য সমন্বয়হীনতা কমিয়ে আনতে হবে। আমরা অনেক পরিকল্পনা নিয়ে আগাই, কিন্তু পরিল্পনাগুলো শেষ পর্যন্ত পর্যটন ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে কাটছাঁট হয়ে যায়।’
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ট্যুরিজমের জন্য আমরা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছি। সব সংস্থা, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই মাস্টারপ্ল্যান করা হবে। আমাদের পর্যটক যেমন দরকার, তেমনি সুন্দরবন সুরক্ষা প্রয়োজন।’ প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান বলেন, ‘পর্যটক বিকাশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বয় প্রয়োজন। সমন্বয় না থাকলে কোনো উদ্যোগ এককভাবে সফল হবে না।’ অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি) সাধারণ সম্পাদক আনজিম আনোয়ার বলেন, ‘পর্যটন বিকাশ ও সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে নীতি নির্ধারকদের উচিত গণমাধ্যমকে সহায়তা করা।’ গত বৃৃহস্পতিবার থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্যুারিজম ফেস্টটি শুরু হয়।
এদিকে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী সপ্তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার থেকে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হওয়া মেলা চলবে রোববার পর্যন্ত। বেলা ১১টায় এই মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল।