ধীরগতিতে হলেও গত পাঁচ বছরে সুতা বিক্রিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি ছিল তালিকাভুক্ত কোম্পানি মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের। তবে চলতি হিসাব বছর থেকেই কোম্পানিটি বড় ধরনের সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। কমে গেছে সুতা বিক্রির পরিমাণ। এক বছরের ব্যবধানে মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলসের বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৪২ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস শতভাগ রফতানিমুখী ওভেন কাপড়ের সুতা উৎপাদন করে। ২০১৩ সাল থেকে সুতা রফতানিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি থাকলেও চলতি হিসাব বছরে পণ্য বিক্রিতে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে কোম্পানিটি।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে কোম্পানির বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সুতার বাজার হারানোয় কোম্পানির নিট মুনাফা প্রায় ৬৭ শতাংশ কমে গেছে।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে সুতা বিক্রি থেকে কোম্পানির আয় ছিল ৮৫ কোটি টাকা। পরের বছর তা ৯৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। আর ২০১৫ সালে বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩ কোটি টাকায়। পরের বছর আয় সামান্য কমলেও ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে বিক্রি দাঁড়ায় ১১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকায়। এতে পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৩৫ শতাংশ। তবে চলতি হিসাব বছর থেকে সুতা বিক্রিতে বড় ধরনের চ্যালঞ্জের মধ্যে পড়ে কোম্পানিটি। এক বছরেরও কম সময়ে সুতা বিক্রি থেকে আয় কমেছে ৪২ শতাংশ।
এদিকে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে এক বছর আগে কারখানা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস। ২০১৭ সালের মার্চে ১৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ইউনিট করার ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি। নতুন এই ইউনিট করার জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। নতুন রিং স্পিনিং ইউনিট করতে ১৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ১০৬ কোটি টাকা ঋণ নেয় কোম্পানিটি। অবশিষ্ট টাকা কোম্পানির রিজার্ভ থেকে দেওয়া হবে। বর্তমানে মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস ২০ কাউন্ট সুতা তৈরি করে। সম্প্রসারণ প্রকল্প সম্পন্ন হলে ১০০ কাউন্ট পর্যন্ত সুতা তৈরি করতে পারবে। নতুন এই ইউনিটটি হবে ৪০ হাজার স্পিন্ডেলের। তবে সম্প্রসারণ প্রকল্পটি কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, তা জানায়নি কোম্পানিটি।
২০১৬-১৭ হিসাব বছরে মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলসের নিট মুনাফা ছিল ১৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। আর চলতি হিসাব বছরে বিক্রি কমে যাওয়ায় নয় মাসে নিট মুনাফা নেমে এসেছে ৬ কোটি ১৭ লাখ টাকায়, যা বছর শেষে ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা হতে পারে।
সুতা বিক্রি থেকে আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি কোম্পানির উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের নয় মাসে কোম্পানির বিক্রির বিপরীতে উৎপাদন খরচ হয় ৭৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এক বছর পর বিক্রির বিপরীতে কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিট মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানির নিট মুনাফার হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ শতাংশের বেশি। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের নয় মাসে কোম্পানির নিট মুনাফা হয় ১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা চলতি বছরের একই সময়ে ৬ কোটি ১৭ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
বিক্রি ও নিট মুনাফা কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলসের শেয়ারের দরেও। এক বছরে কোম্পানির শেয়ারের দর ৩২ টাকা থেকে ১৫ টাকা ২০ পয়সায় নেমে এসেছে। এ সময় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা এ শেয়ারে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ মূলধন হারিয়েছেন। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৬৫ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৯৫ পয়সা।