আবহমান কাল থেকে বাঙালীর ঘরে পান দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রেওয়াজ রয়েছে। পানÑসুপারীÑচুন সম্বনয়ে বানানো পানের খিলি অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়ার সংস্কৃতি এখনো অনেক ক্ষেত্রেই চালু আছে। বিয়ে বাড়িতে মিষ্টির সাথে পানÑসুপারী না নিয়ে গেলে বর যাত্রাই পূর্নাঙ্গ হয় না। মুখ থাকেনা কনের বাড়ির লোকজনের কাছে বর পক্ষের। বাঙালীর অতি প্রিয় এই পান চাষ হচ্ছে কুমিল্লার ৫ উপজেলায়, অন্য ১২ উপজেলার অল্পÑস্বল্প চাষ হলেও জেলার চান্দিনা, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, ব্রাহ্মণপাড়া ও বরুড়ায় ব্যাপক ভাবে চাষ হচ্ছে পানের চাষ।
এসব পান পাতার বাহারী নামও রয়েছে। যেমন সাচি, মহালনী, গয়াশ^রী ও চালতাবুটা।
বর্তমানে জেলার ১৪৯ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন হয় প্রায় সাড়ে ৬ মেট্রিক টন। সে হিসাবে জেলায় পানের মোট ফলন হচ্ছে ৯৬৬ মেট্রিক টন।
উপজেলাওয়ারী পান আবাদের পরিমান ও মোট ফলন হচ্ছে, চান্দিনায় আবাদ ৪০ হেক্টর এবং মোট ফলন ৩২১ মেট্রিক টন। দেবীদ্বারে আবাদ ৫৭ হেক্টর এবং ফলন ৩৯৮ মেট্রিক টন। মুরাদনগরে আবাদ ৫ হেক্টর এবং ফলন সোয়া ৩১ মেট্রিক টন। ব্রাহ্মণপাড়ায় আবাদ আড়াই হেক্টর এবং ফলন ১৭ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন এবং বরুড়ায় আবাদ ৩৫ হেক্টর এবং ফলন ১১৮ মেট্রিক টন।
জেলার পান চাষের উপজেলাগুলোর অনেক পান চাষী পূর্ব পুরুষের ধারা এখনো ধরে রেখেছেন। পান চাষের জমির বাৎসরিক পত্তনের মূল্য বৃদ্ধি, পান চাষে ব্যবহৃত শ্রমিকের মজুরী, সার, কীটনাশক, বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পান উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পান বরজে রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়লে পুঁজি রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ জন্য সরকারিভাবে ব্যাংক ঋণ পাওয়া গেলে চাষীরা তাদের পান চাষ আরো সম্প্রসারিত করতে পারবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়ার পান চাষী প্রান্তোষ চন্দ্র পাল বলেন,পূর্ব পুরুষদের মত তিনিও গত ৩০ বছর ধরে পান চাষ করে আসছেন। পান চাষে সব দিক ঠিকÑঠাক থাকলে চাষের খরচ পুষে লাভের মুখও দেখা যায়।
বাগিলারা গ্রামের পান চাষী রনজিৎ পাল বলেন, উৎপাদন খরচ বেশী হওয়ায় লাভের ভাগটা কম। সব সময় পানের দাম এক রকম না থাকায় লাভÑলোকসানে বেড়াজালে পড়তে হয়। বরুড়ার পান চাষী মদনপাল বলেন, সরকার পান চাষে সাহায্য করলে এ ফসলটি উৎপাদনে চাষীরা উৎসাহ পেতো। উৎপাদিত পান বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেতো।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত জানান, নির্ধারিত ফসলের জন্য নির্দিষ্ট কৃষকে সরকারি প্রনোদনা দেওয় হলেও পান চাষীদের জন্য সরকারিভাবে আলাদা করে কোন বরাদ্দ নেই। তবে আমরা শুধু পান চাষীদের জন্য প্রয়োজনীয় পরমার্শ প্রদান করতে পারি। তিনি আরো জানান, পান চাষীদের জন্য সরকারিভাবে কিছু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে অবশ্যই কর্তপক্ষের নজরে আনবো।