সারা দেশে সতর্কবার্তা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

গুজবের বিরুদ্ধে কঠোর পুলিশ

সারা দেশে সতর্কবার্তা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৩ জুলাই, ২০১৯

গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ১৫টি গণপিটুনির ঘটনায় ১০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ৬৪ জেলায় সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আসলে আমরা হুজুগে বাঙালি এটাতো প্রচলিত কথা। চিলে কান নিয়েছে, কান না দেখে চিলের পেছনে ছুটে যাই। বিষয়টি এ রকম। গুজবের সত্যতা যাচাই না করে যে যেভাবে পারে শামিল হয়। পরে গিয়ে দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তি নির্দোষ ছিল। তখন আফসোস ছাড়া কিছুই করার থাকে না। সুতরাং গুজবে কান দেওয়া থেকে আমাদের সবাইকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে অবশ্য সরকারের উচিত আরো জনসচেতনতা বাড়ানো। আমরা বাঙালিরা অনেক পিছিয়ে আছি। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এসেও আমরা মধ্যযুগের মতো গুজবে কান দিই। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে একজন নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করি। কী সাংঘাতিক ভয়ংকর একটা ব্যাপার। যেখানে কেউ অপরাধ করলেও তাকে পিটিয়ে হত্যা তথা আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। অথচ তাই হচ্ছে।

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর গতকাল সোমবার এক চিঠিতে গুজব ঠেকাতে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-অপারেশনস) সাঈদ তারিকুল হাসান পুলিশ সুপারের কার্যালয় ছাড়াও সারা দেশে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে শিশু চুরি বা ছেলে ধরা গুজব বন্ধ করতে সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার এবং ব্লগগুলো নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ এ-সংক্রান্ত পোস্ট দিলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মইনুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কিছু দুষ্টচক্র থাকে। যারা সব সময় অন্যের ক্ষতি করে মজা পায়। পদ্মা সেতু তৈরিতে মাথা লাগবে। শিশু বাচ্চা দিতে হবে পিলালের ভেতর। এসবতো মধ্যযুগীয় কথাবার্তা। এসব কথা বিশ্বাস করে এমন মানুষও এখনো আছে। যাই হোক এসব গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, এখন থেকে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও নজরদারি রাখবে। তিনি আরো বলেন, এসব বেশির ভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকারকে সাময়িক বেকায়দায় ফেলার মানসে দুষ্টচক্র এহেন অপকর্মে লিপ্ত হয়। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর কেউ এ ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশে পাঠানো চিঠিতে আরো বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ। এ চারটি বিষয় উল্লেখ করে ছেলেধরার গুজব ও গণপিটুনি রোধে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কোন ইউনিট কী ব্যবস্থা নিয়েছে চিঠি প্রাপ্তির ৩ দিনের মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরকে জানাতে বলা হয়েছে।

দিন যত যাচ্ছে, এসব গুজব ভাইরাসের মতো দেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে।

তাই পুলিশ সদর দপ্তর এসব অপতৎপরতা রোধে ওই চিঠিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে সচেতনতা বাড়ানোরও তাগিদ  দিতে বলা হয়েছে। ছুটির পর অভিভাবকেরা যাতে শিক্ষার্থীকে নিয়ে যান, সে বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা, প্রতিটি স্কুলের ক্যাম্পাসের সামনে ও বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, মেট্রোপলিটন ও জেলা শহরের বস্তিতে নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া  হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশসহ কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads