গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সর্বশেষ পুরুষ জিরাফটিও মারা গেছে। গত মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় জিরাফটির মৃত্যু হয়েছে বলে পার্ক কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। পরদিন বুধবার সকালে সাফারিতে গিয়ে জিরাফটি মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে কর্মচারীরা। পরে খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মৃতদেহ উদ্ধার করে। পার্কে কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলায় এ জিরাফের মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মৃত জিরাফের শরীর থেকে নমুনা (স্যাম্পল) সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি জিরাফ বাচ্চা দিয়েছে এ পার্কে। এখন বংশবৃদ্ধির শেষ পুরুষ জিরাফের মৃত্যুতে আগামীতে আর কোনো জিরাফ জন্ম নেবে না এ পার্কে। পার্কে জিরাফের বংশবৃদ্ধি এখন চরম শঙ্কায় পড়ল।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে কয়েক দফায় ১২টি জিরাফ আমদানি করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। এর মধ্যে ৪ পুরুষ ও ৮টি নারী জিরাফ ছিল। উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে পার্কে ৪টি জিরাফ বাচ্চার জন্ম হয়। এর মধ্যে ৩টিই ছিল নারী ও একটি ছিল পুরুষ শাবক। গত বছরের শেষের দিকে পুরুষ জিরাফ শাবকটি মারা যায়। পার্কে এখন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক তিনটি নারী জিরাফসহ মোট ৭টি নারী জিরাফ রয়েছে। পুরুষশূন্য হয়ে পড়ল জিরাফ পরিবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, পার্কে দুজন প্রাণী চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ভেটেরিনারি সার্জন ও একজন সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন। ভেটেরিনারি সার্জন ডা. জুলকার নাইন মানিক দীর্ঘদিন দায়িত্বের বাইরে ছিলেন পড়াশোনার প্রয়োজনে। সেই থেকেই সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নিজাম উদ্দীন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ছিল পার্কের চিকিৎসাব্যবস্থা। তবে তিনি সবসময়ই প্রাণীর চিকিৎসা সেবায় ছিলেন উদাসীন। তারা অভিযোগ করে বলেন ডা. নিজাম উদ্দীনের পার্কে থাকা বাধ্যতামূলক থাকলেও তিনি থাকতেন শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারে। কখনো মন চাইলে পার্কে আসতেন কখনো আসতেন না। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা করতেন না। নিজের খুশিমতো অফিস করতেন। কর্মকর্তারা কাজের জন্য চাপ দিলে এক বড় কর্মকর্তা তার আত্মীয় বলে শাসিয়ে দিতেন। এ নিয়ে পার্কে কেউ তার ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারত না। একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে তার মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
অভিযুক্ত সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নিজামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব কিছুই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। পার্কে প্রাণী মারা যাওয়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অব্যবস্থাপনা। জিরাফটি কেন মারা গেল এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগেও জিরাফের মৃত্যু হয়েছে। অনেক সময় প্রাণী হঠাৎ অসুস্থ হলেও পার্কের কর্ত্যরত চিকিৎসক পার্কে অনিয়মিত থাকায় সময়মতো প্রাণীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় না। চিকিৎসকদের পার্কে থাকা বাধ্যতামূলক। সরকার তাদের থাকার জন্য আলাদা ডর্মেটরি বরাদ্দ রেখেছে। তবুও নিয়মের তোয়াক্কা না করে ডা. নিজাম উদ্দীন পার্কের বাইরে নিয়মবহির্ভূতভাবে থাকে। নিজের খেয়াল খুশিমতো পার্কে আসে যায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন কাজের চাপ দিলে বিভিন্ন প্রকার আত্মীয় স্বজনের ভয় দেখায় পার্কের কর্মকর্তা কর্মচারীদের। তিনি বলেন, এক মাত্র পুরুষ জিরাফটির মৃত্যুতে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ল সাফারি পার্ক। থেমে গেল জিরাফের বংশবৃদ্ধিও।