এখনো অস্থিতিশীল পেঁয়াজের বাজার। লাগামহীন দামেই বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। সরকারও পেঁয়াজের দাম কমানোর চেষ্টা করছে। তবে চাইলেও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো এক-দেড় মাস অর্থাৎ নতুন পেঁয়াজ ওঠা পর্যন্ত। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও যে দাম কমবে সে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল থাকবে।
এদিকে পেঁয়াজের বড় চালান আসছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, শিগগিরই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশের বেশ কয়েকটি বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিসর ও তুরস্ক থেকে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছে। দু-একদিনের মধ্যে এসব পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি শিল্পগোষ্ঠী পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। এগুলো হলো- সিটি, মেঘনা ও বিএসএম গ্রুপ। এদের মধ্যে সিটি ও বিএসএম উভয় কোম্পানির আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলার কথা জানা গেছে। তাদের মাধ্যমে আসছে সাত থেকে আট হাজার টন পেঁয়াজ। ওই পেঁয়াজ দিয়ে সারা দেশে তিন দিনেরও জোগান পূরণ হবে না। আর যারা পেঁয়াজ আমদানির জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা এখনো কার্যক্রম শুরু করেননি। তাদের মধ্যে অধিকাংশ আসন্ন পেঁয়াজের মৌসুমের আগে আমদানি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ পেঁয়াজ আমদানি সময় সাপেক্ষ। আবার মৌসুমের পরে পেঁয়াজ আমদানি করলে তা লোকসানি হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এর আগে কখনো পেঁয়াজ আমদানি করা হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে পেঁয়াজ আনছি। ওই পেঁয়াজ আগামী মাসের ১৮ তারিখের পরে দেশে পৌঁছাবে।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, সরকার বলছে বলেই পেঁয়াজ আনছি। সরকার যতক্ষণ বলবে, ততক্ষণ আনা হবে।
অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা যায়, বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে, প্রতিদিন আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, পেঁয়াজের দাম দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পরে চতুর্থবারের মতো একই কথা শোনানো হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সংস্থাটি বলে আসছে, বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। পাশাপাশি মিয়ানমার, মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। শিগগিরই পেঁয়াজের দাম কমবে। তবে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি সেভাবে বাড়েনি। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দামও কমছে না। মধ্য সময়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছিল তাও ভারতের কারণে। ওই সময় নিষেধাজ্ঞার আগে এলসি করা পেঁয়াজগুলো বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল ভারত।
দেশে পেঁয়াজের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাক সেলে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। তবে ৩৫টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা মূল্যে এ পেঁয়াজ জনবহুল এ শহরের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এতে করে বাজারে এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৪টি টিম প্রতিদিন ঢাকা শহরের বাজারগুলো মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও প্রতিটি জেলা প্রশাসন জেলার বাজারগুলোতে মনিটরিং করছে, ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো বড় পাইকারি বাজারগুলোতে অভিযান চালানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে জোগানের সঙ্গে চাহিদার সামঞ্জস্য না থাকায় কোনো কার্যক্রমই কাজে আসছে না।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি পেঁয়াজের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত, যা তিন দিন আগেও ছিল ১০০ টাকা।
জানতে চাইলে পেঁয়াজের আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মাজেদ বলেন, আমরা যত কথাই বলি, ভারতের পেঁয়াজ আমদানি শুরু না হলে দাম কমবে না। কারণ আমরা অন্যান্য দেশ থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ পাচ্ছি না। আবার আমদানিও করতে হচ্ছে চড়া দামে।