সরকার হস্তক্ষেপ না করলে জামিন পাব : খালেদা

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

সরকার হস্তক্ষেপ না করলে জামিন পাব : খালেদা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ৩ অক্টোবর, ২০১৯

কিছুদিন পরপর আলোচনায় আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি। দেশি-বিদেশি দূত ও দলীয় নেতাদের ইতঃপূর্বের একাধিক উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে। আইনি লড়াইয়ে সম্পৃক্ত আইনজীবীরাও জামিনের হাল ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যাশায় এখনো অটল কারাবন্দি খালেদা জিয়া। তার আশা সরকার হস্তক্ষেপ না করলে জামিন পাবেন তিনি।

‘হস্তক্ষেপ’ ঠেকাতে এবার দলের ছয় এমপি উদ্যোগ নিয়েছেন। আলোচনা করছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে। পথ খুঁজছেন গুরুতর অসুস্থ দলীয় প্রধানের মুক্তি ও চিকিৎসার। আলোচনা রয়েছে এ উদ্যোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। মুক্তি পেলে খালেদা জিয়া প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন, এমন কথাও গণমাধ্যমে জানিয়েছেন এমপিরা। রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর আছে- সংসদে যোগ দেওয়ার অলিখিত শর্ত ছিল দলীয় প্রধানের মুক্তির। এ দাবিটি জোরালো করছেন বিএনপির ছয় এমপি। গতকাল দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি সার্বিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছে।

দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গত ১ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজা হয় তার। পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বাতিল চেয়ে করা আপিলে সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা চলছে। বন্দিদশায় নতুন-পুরনো নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তার স্বজন এবং দলের শীর্ষ কয়েক নেতা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। চিকিৎসা সেবা ও সুস্থতা নিয়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও চিকিৎসকরা পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেছেন। একপক্ষ বলছেন তিনি গুরুতর, আরেক পক্ষের দাবি তার উন্নতি ঘটছে, আবার আরেকটি পক্ষ বলছেন তার (খালেদা) অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।  

দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়া খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় একাদশ সংসদের তিন এমপি ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে হারুনুর রশীদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আমিনুল ইসলাম বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে ৬ তলায় যান যেখানে একটি কেবিনে খালেদা জিয়া রয়েছেন। এক ঘণ্টা এই সাক্ষাৎ হয়। গতকাল বুধবারও সাক্ষাৎ করেছেন বগুড়ার এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, মোশাররফ ও সংরক্ষিত আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহান। কিছু সময় পরেই ফের সাক্ষাৎ করেছেন আগে সাক্ষাৎ করা তিন এমপি।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তারা। এ সময় এমপিরা ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বার্তা দিয়েছেন। তারা দাবি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারে যেন বাধা দেওয়া না হয়। জবাবে প্রধানমন্ত্রী জামিন দেওয়ার এখতিয়ারপ্রাপ্ত আদালতের দিকে পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন।   

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকরা একাধিক এমপি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তার সিদ্ধান্তে অটল। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, শারীরিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় কী? সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা প্যারোলের কথা সভা-সমাবেশে বলছেন। জবাবে খালেদা জিয়া এমপিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সংসদে দেশের মানুষের কষ্টের কথা বলো, দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার কাজ করো। এমপিদের ধমক দিয়ে বলেছেন, প্যারোলের চিন্তা করলে তো অনেক আগেই মুক্ত হতাম। আমি তো অন্যায় করিনি। আমাকে বন্দি রাখা হয়েছে। ওরা আদালতে হস্তক্ষেপ না করলে আমি জামিন পাব। তোমরা জামিনের জন্য আদালতে চেষ্টা করো...।’

এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক দাবি করে তার আইনজীবীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আইনি লড়াইয়ে মুক্তি মিলবে না। রাজপথেই সমাধান খুঁজতে হবে। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আন্দোলনের রূপরেখা আঁকছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন মহানগরে সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে সরকার পতনের মতো হুমকিও দিচ্ছেন দলটির নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বলেছেন, বিএনপি নেতারা নাকি আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করবেন? কিন্তু কই আন্দোলনের চোট, ঢেউই তো দেখি না। 

গত চার মাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে সরকার বিবেচনা করবে।’ মূলত এর পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি আলোচনায় আসে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads