সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

ব্লু ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি

ছবি : সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

ব্লু ইকোনমি

সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

  • নাজমুল হোসেন
  • প্রকাশিত ৪ মার্চ, ২০১৯

ব্লু ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সাগরের অজস্র জলরাশি ও এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণে এক অর্থনৈতিক বিপ্লব। পৃথিবীর তিন ভাগ জল। পৃথিবীর দেশগুলো তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে তাকিয়ে আছে সমুদ্রবক্ষে সঞ্চিত সম্পদের দিকে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯০০ কোটি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাবার জোগান দিতে বাধ্য হয়েই তখন সমুদ্রের মুখাপেক্ষী হতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সমুদ্র অর্থনীতি বহুভাবে অবদান রেখে চলেছে। বিভিন্ন তথ্যমতে, বিশ্বের ৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। সমগ্র বিশ্বে ক্রমেই ব্লু ইকোনমি জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রজয়ের পর এবার সে বিপ্লব বাস্তবায়নের রোডম্যাপে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমুদ্র অর্থনীতি ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছে দেশ। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে সমুদ্রনির্ভর ব্লু ইকোনমির বদৌলতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রে শুধু মাছই রয়েছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির। এ ছাড়া শামুক, ঝিনুক, শ্যালফিশ, কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙরসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী। যেগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অর্থকরী ফসল হিসেবে চিহ্নিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রাণিসম্পদ ছাড়াও ১৩টি জায়গায় আছে মূল্যবান বালু, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের মতো খনিজসম্পদ যা অতি মূল্যবান। সমুদ্র তলদেশের এসব সম্পদ আহরণের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। এর মাধ্যমে নতুন ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব যা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

সরকারের এসডিজি’র ১৪ নম্বর ধারায় টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদের অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। আর তাই ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণের জন্য এই সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমান সরকার ব্লু ইকোনমির মাধ্যমে সমুদ্রসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সমুদ্র অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করতে সরকার সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন এবং কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পকে আরো বিকশিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে ১২০ কিলোমিটারের পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এই সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারলে গোটা বাংলাদেশই বদলে যেতে পারে। এছাড়া কৃত্রিমভাবে বাঁধ তৈরি করে পলিমাটি জমাট/চর জাগানোর মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে মালদ্বীপের মতো দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলাও সম্ভব। এর ফলে এ অঞ্চলে পর্যটকদের ঢল নামবে। এতে দেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিকতা পাবে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে ২০১৬ সালে বঙ্গোপসাগর থেকে ৮০ লাখ টন মাছ ধরা হলেও বাংলাদেশ ধরতে পেরেছে মাত্র ৯৫ হাজার টন। কারণ দেশের ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসীমার মধ্যে মাছ ধরার সীমা ৩৭০ কিলোমিটার। অথচ বাংলাদেশের জেলেরা যেতে পারেন কেবল ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সমুদ্রের তলদেশের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদ ব্যবহার করতে হলে যে পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির দরকার, এখনো আমাদের সেই পরিমাণ জনশক্তি ও প্রযুক্তি নেই। তবে ব্লু ইকোনমিকে কাজে লাগাতে হলে সরকারকে দ্রুতই আরো মনোযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে আশার কথা, হাতে নেওয়া হয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। এর বাইরে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে ব্লু ওশান ইকোনমি বা নীল সমুদ্র অর্থনীতি।

 

লেখক : প্রকৌশলী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads