‘গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাবে বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। এতে করে গলতে শুরু করেছে মেরু অঞ্চলের জমে থাকা বরফ। ফলে একটু একটু করে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা। যার প্রভাব বঙ্গোপসাগরেও বিস্তার লাভ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমান্বয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা মাত্র এক ফুট বাড়লেই বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চল স্থায়ীভাবে প্লাবিত হবে।’মঙ্গলবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি), ঢাকা কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পর্যায়ের ক্ষতি ও দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইইবির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের ভূ-পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. এস আই খান।
প্রকৌশলী এস আই খান তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বর্তমান বিশ্বে নানা ধরনের দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্প, বন্যা, বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ ঘটছে প্রাকৃতিক কারণে। কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে বড় দুর্যোগ হলো মানুষের তৈরি জলবায়ু পরিবর্তন। আমরা জানি যে, মানুষের বিভিন্ন কাজের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাস বেড়ে যাচ্ছে। যদিও গ্রিন হাউজের জন্য বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। যাদের ভূমিকা রয়েছে তার মধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপের মতো দেশ ৮০ ভাগ গ্রিন হাউজ গ্যাস তৈরি করছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হিমায়িত বরফ গলে যাচ্ছে। যা আমাদের দেশে চলে আসছে। আমরা লক্ষ করছি বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের পানি ১ মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী ১৬ শতাংশ স্থান প্লাবিত হবে। যার ফলে প্রায় ৩ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধ্বংস হবে জীববৈচিত্র্য। বাস্তুহারা বিশাল জনগোষ্ঠীকে কোথাও সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।
এস আই খান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বজ্রপাতের ফলে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। বজ্রপাত মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে লাখ লাখ তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। নদীবন্দরগুলোতে ‘লাইটনিং ডিটেক্টিভ সেন্সর’ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই সেন্সর বসানোর ফলে ১০ থেকে ৬০ মিনিট আগে বজ্রপাতের সঙ্কেত পাওয়া যাবে। যার ফলে মানুষ সাবধান হতে পারবে। হাওর অঞ্চলগুলোতে মানুষ খোলা মাঠে কাজ করে। সেখানে বজ্রপাতের সময় আশ্রয়স্থল নেই। সেজন্য বর্তমান সরকার কিছু কিছু বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। যার ফলে অল্প সময়ের নোটিশে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পুরোপুরিভাবে চালু হলে ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম আভাস পাবে। পটুয়াখালী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বর্ষার পানি আটকাতে ৬০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৩০ বছর সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে জাপানি প্রযুক্তি দ্বারা ‘বে ক্রস ড্যাম’ নির্মাণের বিষয়ে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। একই সঙ্গে গঙ্গা চুক্তির পাশাপাশি তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. ওয়ালিউল্লাহ সিকদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রশাসন ও অর্থ) প্রকৌশলী মো. নূরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ।