ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিক (এইউএপি) দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এইউএপি’র ইতিহাসে প্রথমবার একজন বাংলাদেশি নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের পতাকা আরো একবার বিশ্বমঞ্চে সগৌরবে উত্তোলিত হলো। আগামী ৮ বছর আন্তর্জাতিক এই সংগঠনে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। তারই হাত ধরে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আরো বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
এইউএপি’র নিয়ম অনুযায়ী, সবুর খান দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন দুই বছর। পরে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে উত্তীর্ণ হবেন। এই পদে দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। এইউএপি’র ১৬তম সাধারণ সম্মেলনে ১৯ নভেম্বর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ডের সুরানারি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির রেক্টর অধ্যাপক ড. ইউরাপং পেয়ারসুয়াং এবং ভারতের হিন্দুস্তান গ্রুপ অব ইনস্টিটিউশনসের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. আনন্দ জ্যাকব ভার্গিসকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন সবুর খান। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের এত বড় সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ২৫ নভেম্বর মিট দ্য প্রেসে মতবিনিময় সভায় এই অর্জনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সবুর খান। নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করারও নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
ড. সবুর খান বলেন, এইউএপি’র এই অর্জন শুধু ড্যাফোডিলের নয়, বরং বাংলাদেশের। এটি নিঃসন্দেহে গর্বের মুহূর্ত। সামনে এগিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাস জোগাবে এই অর্জন। আমাদের মেধাবী তরুণ প্রজন্ম আছে। তাদের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থী বিনিময় প্রকল্প ও গবেষণা কাজ একসঙ্গে পরিচালনা করতে সহায়তা করব। তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। অর্থনীতিতে দেশ সমৃদ্ধ হবে। কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্বের নামিদামি তিন শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ড্যাফোডিলসহ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, গবেষণা, সংস্কৃতি বিনিময় প্রোগ্রাম, লিডারশিপ প্রোগ্রামসহ নানা প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছেন। মেধা ও যোগ্যতার জানান দিচ্ছেন বিশ্বমঞ্চে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল ভাঙছে বিশ্বের। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বদরবারে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। এখন থেকে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এইউএপি’র সদস্য হওয়ার পথটা আরো সুগম হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে সরেজমিনে শিখতে পারবে। বিশ্ববাজারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে শিক্ষার্থীদের।
সবুর খান আরো বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বাংলাদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এইউএপি’র সদস্য হয়েছে। এইউএপি’র মূল উদ্দেশ্য এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক নির্মাণ করা। শিক্ষার বিস্তার ও পরিধি বাড়ানোর জন্য একযোগে কাজ করা। আগামী ৮ বছর আমাদের শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে ভোট প্রদান করতে পারব। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে একসাথে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই বৈশ্বিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।
শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শুধু কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতাই দায়ী নয়। অনেকাংশে দায়ী প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা। কর্মসংস্থানের খোঁজে দেশের বাইরে যাচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ। কিন্তু মূল্যায়ন পাচ্ছেন না তারা। শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্ববাজারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারছে না তরুণ প্রজন্মকে। আর বৈশ্বিক রাজনীতি বাংলাদেশকে একটি অনুন্নত দেশ হিসেবে দেখে। নেই কোনো বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবুর খান বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো বেশি আন্তর্জাতিকীকরণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার পরিবেশ দিতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থী বিনিময় প্রকল্প, সামার প্রোগ্রাম, ইন্টার্নশিপ, যৌথ গবেষণা প্রকল্প, শিক্ষক বিনিময় প্রকল্প প্রোগ্রাম বেশি আয়োজন করতে হবে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের প্রোগ্রাম শুরু করেছে। গবেষণার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত শিক্ষাব্যয় বেশি। সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ প্রোগ্রাম করতে হবে।
স্বনির্ভর প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ড. মো. সবুর খান। তিনি পেশায় একজন সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। ২০০২ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন। একজন আইসিটি ব্যক্তিত্ব। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির ঊষালগ্ন থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী হিসেবে এখনো এ খাত উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তারই হাত ধরে দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়াশোনার পাশাপাশি বিনামূল্যে ল্যাপটপ প্রোগ্রাম চালু করে ডিআইইউ। উদ্যোক্তা তৈরির উদ্দেশে তিনি বিজনেস ইনকিউবেটর, স্টার্টআপ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছেন।