সরকার

সবজির দরও নির্ধারণ করবে সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর, ২০২০

মূল্যবৃদ্ধির অস্বাভাবিক প্রবণতা ঠেকাতে চাল ও আলুর পর এবার সবজির দর নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দাম নির্ধারণ করে দিলে বাজারে এসব পণ্যের দাম আর অস্বাভাবিক হবে না বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ মনে করছে।

বর্তমান বাজারে বিভিন্ন সবজির পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দর পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পণ্য উৎপাদনে কৃষকের খরচ কতো, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব সমন্বয় করে কিছুদিনের মধ্যেই সবজির দর নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে জানান কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

সরকারি হিসাবে, বছরে দেশে সবজির চাহিদা এক লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় ১০ লাখ মেট্রিক টন সবজি বেশি উৎপাদন করা হলেও দামের ক্ষেত্রে স্বস্তি পায়নি সাধারণ মানুষ। অপরদিকে বেশি উৎপাদনের ফলে কৃষকও উৎপাদন খরচ পান না। ফলে কৃষক ও ক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাঝখান থেকে ফায়দা লুটে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতেই সরকার সবজির দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহম্মদ ইউসুফ জানিয়েছেন, বাজারে সব সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থাকে। এরাই বাজারকে অস্থির করে। এদের দৌরাত্ম্যে কৃষক ও সাধারণ ক্রেতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের নানা উদ্যোগ এবং অভিযানেও তা ঠেকানো যায় না। বাজারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বারবার সমালোচনার মুখে পড়ে। এসব কারণেই এবার বাজারের সবজির দর নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকার আলু ও চালের যে দর ঠিক করে দিয়েছে তা হয়তো শতভাগ কার্যকর হয়নি, তবে অস্বাভাবিক হারে বাড়ারও সাহসও পায়নি। হয়তো সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী আলু ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি না হয়ে ৪০ অথবা দুই টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ওই সময় আলুর দর ঠিক করে না দিলে হয়তো মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে সাধারণ ক্রেতাদের ৭০ টাকায় কিনে খেতে হতো। দর নির্ধারণ করে দেওয়ার ফলে এটুকু উপকার তো সাধারণ মানুষ পেয়েছে।

যখন কোনো কারণ ছাড়াই চালের বাজার অস্থির হতে শুরু করেছিল, তখনই সরকার দর নির্ধারণ করে দেয়। ফলে অস্থিরতার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে। তা নাহলে হয়তো চালের বাজার অন্যরকম রূপ নিতো। সবজির দর ঠিক করে দেওয়ার পর বাজার অস্থির হলে মনিটরিং করা সহজ হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা বাজার মনিটরিং জোরদার করবে। এতে সাধারণ ক্রেতারা উপকার পাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাজারে পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেওয়ার এখতিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের, বিশেষ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। তারা যদি সবজির দর নির্ধারণ করে দেয়, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ উপকার পাবেন। নির্ধারিত দরটি কার্যকর নাহলে সাধারণ মানুষ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ পেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। জেলা প্রশাসনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সরকার প্রতি কেজি উৎকৃষ্টমানের মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৫৭৫ টাকা এবং মাঝারিমানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৪৫ টাকা দরে ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। যদিও নানা অজুহাতে এ দরে চাল বিক্রি করেননি মিলাররা। এছাড়া সরকার দুই দফায় দাম বেঁধে দিলেও এখন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। সরকার প্রথমে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা এবং পরবর্তীতে ৩৫ টাকা বেঁধে দেয়। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া এ দামে ক্রেতারা আলু কিনতে পারছেন না।

গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় নেমে এসেছে। আমদানি করা বড় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ এখনও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ী বলছেন, বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মূলা সবকিছুর সরবরাহ বেড়েছে। সঙ্গে নতুন করে শালগম ও কাঁচা টমেটো উঠতে শুরু করেছে। ১২০ টাকার শিম এখন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম, আরো কমবে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম, ফুলকপির দাম কিছুটা কমেছে। তবে পাকা টমেটো ও গাজরের কেজি এখনও ১০০ টাকা। বরবটি, বেগুনের কেজি ৫০ টাকার ওপরে। এদিকে সরবরাহ বাড়ছে বলে শিম ও কপির দাম কিছুটা কমেছে। নতুন আলু ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads