কে না চায় সফলতা। এক্ষেত্রে সবাই এর প্রেমিক। কেউ থাকতে চান না পিছিয়ে। একধাপ এগিয়ে যাওয়ার গল্প কার না ভালো লাগে। এক কথায় সফলতার গল্পটা সৃষ্টির সূচনা থেকেই মনুষ্যকুলকে ঘিরে আবর্তিত।
জীবনে সবাই সুখী ও সফল হতে চায়। সফলতা শব্দটি মুখে যত সহজে উচ্চারণ করা যায় তত সহজে বাস্তবজীবনে প্রতীয়মাণ করা যায় না। সফলতা বয়সের ভারে বাঁধা নয়। আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, যেখানেই বসবাস করেন না কেন আপনার প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিই আপনাকে সফল করতে পারে। প্রতিটি মানুষের সফলতার ক্ষেত্র আবার ভিন্ন। চাইলে যেকোনো পেশা থেকেই সর্বোচ্চ সফল হওয়া যায়।
জীবনে সফল হতে হলে সফল মানুষের পথ অনুসরণ করতে হবে। অদম্য প্রচেষ্টা নিয়ে সামনের পথে এগুতে হবে। চলুন জেনে আসা যাক সফল মানুষের সফলতার মূল সূত্র কী ছিল। কেনই বা তারা সফল হয়ে অমরত্বের জায়গা দখল করে আছেন।
আপনি সফল, তা মনের গভীরে ফুটিয়ে তুলুন
সফলতার একটি সূত্র হচ্ছে আপনি নিজেকে প্রথম থেকেই সফল ভাবুন। আপনি নিজেকে যে অবস্থানে দেখতে চান, জীবনে যা কিছু পেতে চান তার চিত্র মনের গভীরে ভালো করে ফুটিয়ে তুলুন। আপনার কল্পনার জগতে আপনি যা কিছু ভাববেন তা বাস্তবে আপনার হাতে ধরা দিতে বাধ্য।
আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘Imagination is more important than knowledge’ অর্থাৎ কল্পনা জ্ঞানের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কল্পনার জগৎ যত রুচিশীলভাবে সাজানো হবে আপনার সফলতা তত তাড়াতাড়ি আপনাকে ধরা দেবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন ইঞ্জিনিয়ার যখন একটি ব্রিজ বা সেতু বা বাড়ি নির্মাণ করেন তার আগেই পরিকল্পনা করে রাখেন তারপর ওই কাজে হাত দেন। পূর্ব পরিকল্পনা থাকলে কাজটা অধিক সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে। কোনো রকম পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করলে কাজে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮%।
এ কারণে বলা যায় কল্পনা করুন, সুন্দর মানসিকতা গড়ুন এবং ইতিবাচক থাকুন। এ তিনটি কাজ সফলতার পথ সহজ করে দেয়।
জীবনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
প্রথমেই খুঁজে বের করুন আপনি কোন কাজ করতে ভালোবাসেন এবং কোন কাজ আপনাকে সন্তুষ্টি এনে দেয়। যে কাজ আপনাকে সন্তুষ্টি এনে দেয় সে কাজে সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অন্যকে অনুকরণ না করে নিজের মতো হোন। আপনি ছবি আঁকায় ভালো হলে ছবি আঁকুন, নাচ ভালো জানলে নাচুন এবং গাইতে জানলে গানকে নিয়েই স্বপ্ন দেখুন। উদ্যোক্তা হতে চাইলে উদ্যোক্তা হোন এবং ব্যবসা করতে চাইলে ব্যবসা করুন। আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিতে অপ্রস্তুত থাকেন তাহলে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি যে ওই বিষয়ে সফল হয়েছে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। আপনি নিজের ভালোবাসার কাজকে বাছাই করতে না জানলে সফলতা আপনার হাতে ধরা দেবে না। প্রত্যেকটি মানুষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে ভিন্ন। তাই নিজের সঠিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন।
কৌতূহলী হোন
প্রতিটি সফল ব্যক্তির জানার অদম্য কৌতূহল থাকে। যদি তারা কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানে তাহলে সেই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বার বার চেষ্টা করে যায়। সফল হওয়ার জন্য কৌতূহলী হতে হবে, জানার আগ্রহ থাকতে হবে, পরিবেশকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থাকুন
সফল ব্যক্তিদের অনুসরণ করুন। যারা ধনী, সুপরিচিত এবং সফল তাদের অনুসরণ করুন, তাদের লেখা পড়ুন এবং বক্তব্য শুনুন। সফল ব্যক্তিদের সফলতার পিছনের গল্প শুনুন জানুন। তাদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন।
পড়াশোনা করুন
সফলতা অর্জনের জন্য পছন্দের কাজ সম্পর্কে প্রচুর পড়াশোনা করুন, বেশি বেশি শুনুন, বুঝুন, শিখুন। মানুষ সৃষ্টির সেরা প্রাণী, কারণ তার বুদ্ধিমত্তা। সেই বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে যা কিছু প্রয়োজন সবকিছু অর্জন করতে পারে। আপনার জানার বা জ্ঞান অর্জনের দরজাটিকে সব সময় খোলা রাখুন। কারণ আপনি নিজেও জানবেন না কোন শিক্ষা আপনাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।
উদ্যমী হোন
সফলতার জন্য উদ্যমী ও লেখা থাকার মানসিকতা থাকতে হবে। কখনো ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। সমস্যা নিয়ে চিন্তা নয় বরং এর সমাধানের দিকে গুরুত্ব দিন। কাজে ব্যর্থতা থাকবেই তাই বলে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া চলবে না। লেগে থেকে সাহসের সঙ্গে সামনে এগুতে হবে।
স্বপ্ন দেখুন
সফল হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে স্বপ্ন। স্বপ্নই মানুষকে লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করে। ব্রায়ান ডায়সানের মতে, ‘স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন’। এপিজে আবদুল কালামের মতে, ‘স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে;
স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না’।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের মতবাদ থেকে বোঝা যায় স্বপ্ন ভেতর থেকে তাড়না দেয়, সামনের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা জোগায় তাই স্বপ্ন দেখতে হবে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন। স্বপ্ন দেখুন বেশি করে।
কাজে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন
জীবন যেখানে আছে সেখানে কাজ আছে। সফলতার জন্য প্রয়োজন চিন্তা, পরিকল্পনা ও কাজ। কাজ হলো সফলতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। কাজের মধ্যে ধারাবাহিকতা জরুরি। তাহলেই খুব দ্রুত সফলতার দিগন্ত উন্মোচিত হবে। উইলিয়াম ল্যাঙলেট বলেছেন, ‘যেখানে পরিশ্রম নেই সেখানে সফলতা নেই’।
সফলতা রাতারাতি ধরা দেয় না। সফলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন প্রচেষ্টা, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা, ইতিবাচক চিন্তা করা এবং যেকোনো অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা। ঝড়, বাধা, বিপত্তি অতিক্রম করেই যুগে যুগে বহু গুণীজন সফল হয়েছেন এবং আপনাকেও সমস্ত প্রতিকূলতা সহ্য করে সফলতার পথে অগ্রসর হতে হবে।