ধর্ম

সন্তানের শ্রেষ্ঠ সম্পদ মা-বাবা

  • প্রকাশিত ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মাহফুজ আরেফীন

 

মা-বাবা ছাড়া একটি সন্তান সুস্থ সুন্দর নিখুঁতভাবে গড়ে উঠতে পারে না। মা-বাবার কারণেই আমরা এই সুন্দর পৃথিবীর মুখ দেখতে পাচ্ছি। মুক্ত-স্বাধীনভাবে খাওয়া-দাওয়া, ঘুম-বিশ্রাম, মনের সুখে ঘুরে বেড়ানো, পড়াশোনা-চাকরি-বাকরি করে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকতে পারছি। পৃথিবীতে যে দুজন মানুষ আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে পেটে ধারণ করেন। অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর স্বপ্নে বিভোর প্রতিটি মা-ই জানেন যে, জন্মদানের মুহূর্তে তার নিজের জীবন প্রদীপটুকু নিভে যাবার সম্ভাবনাও শতভাগ। তবুও  তার স্বপ্ন দেখা থেমে থাকে না। সন্তানের মুখখানা দেখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার মাঝেও যেন সুখ। শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার থেকে এই পৃথিবীতে অসহায় কেউ থাকে না। কেননা তখন সে অনেক ছোট থাকে, হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না, কথা বলতে পারে না। সেই সময় তার পাশে বাবা-মাই ঢাল হয়ে  দাঁড়ায়। কোলে নিয়ে তিল তিল করে নিজেদের রক্ত পানি করে নিজেদের পেটে ক্ষুধা পুষে রেখে সন্তানের ক্ষুধা মেটান। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। কেননা তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি আরো নির্দেশ দিয়েছি, আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে তোমাদের আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা লোকমান, আয়াত- ১৪)

 

আমাদের ভবিষ্যৎ-চিন্তায় যারপরনাই অধীর থাকেন মা-বাবা। নিঃস্বার্থভাবে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ সব চাহিদা মেটান। মানুষের মতো মানুষ করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। নীরবে, নিঃশব্দে, নিভৃতে বাবা দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন আয়ের পিছনে ছুটে। সন্তানের মুখে ভালোটা তুলে দিবে বলে, পছন্দের জামাটা কিনে দিবে বলে, কিংবা লেখাপড়ার সীমাহীন খরচ মেটাবে বলে। নিজের সুখটুকু বিসর্জন দিয়ে, নানান কায়দায় অর্থ সাশ্রয় করে সন্তানের জন্যে সুখ কেনেন বাবারা। বাবা মানে একটু শাসন, অনেক ভালোবাসা। প্রতিটি মানুষের জীবনে বাবা ছাদ হয়ে থাকেন। আমাদের বাবাও আমাদের জন্য বটবৃক্ষের ছায়া। বর্তমান সমাজে প্রকট আকার ধারণ করেছে। মা-বাবার অবাধ্যতার শাস্তি দুনিয়াতেও পেতে হয়। তার কোনো দোয়া কবুল করা হয় না।  রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা চাইলে বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু মা-বাবার অবাধ্যতার গুনাহ তিনি মাফ করবেন না। আর অবাধ্য সন্তানের সাজা তার মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই দেয়া হবে।’ (মিশকাত-৪২১)।

 

 

মানুষের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা যত না সমপ্রসারিত হচ্ছে; ঠিক একইভাবে ততটাই মানুষ আত্মকেন্দ্রিক, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও স্ত্রী-সন্তানকেন্দ্রিক চিন্তা-চেতনায় আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক এই মানুষগুলো যে যত বেশি নিজেকে উন্নতির সোপানে পৌঁছাতে পারছে সে ঠিক তত বেশিই নিজের শিকড়কে, নিজের অস্তিত্বকে ভুলছে। আজকের সমাজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সীমাহীন অবহেলার প্রতিচ্ছবি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া পর্যন্ত মা-বাবা সন্তানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন। সন্তানের জন্য এত ভালোবাসার আর কেউ নেই। কিন্তু অতি দুঃখের সঙ্গে আজকাল দেখা যায়, পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে অনেকে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দেন। যা একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়। আজ বৃদ্ধ বাবা-মায়েরা বোঝা হয়ে পড়েছে। নিদারুণ সব অবহেলা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাবা-মাদের। আমাদের জন্মদাতা মা-বাবা। এ পৃথিবীতে তাদের মতো আপনজন আর কেউ ছিল না। তারা আমাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত।

 

পিতা-মাতা সব সময় সন্তানের কল্যাণের কথা ভাবেন। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে কোনো সন্তান কখনো সফলতার পথে এগিয়ে যেতে পারে না। মা-বাবার অবাধ্য সন্তানের ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত কর না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ্’ শব্দটিও বল না, তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো, ‘হে প্রভু, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৩, ২৪)

মা-বাবা যেসব ভালো কাজ চালু করে গেছেন, তা যেন অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। মা-বাবা কোনো ভালো কাজের ওয়াদা করে গেলে যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। তদ্রূপ তারা কোনো গোনাহের কাজ চালু করে থাকলে তা বন্ধ করা অথবা শরিয়তসম্মতভাবে সংশোধন করার চেষ্টা করা। মা-বাবার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। মা-বাবার বন্ধুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, সম্মান করা, সুস্থ বিবেকসম্পন্ন প্রত্যেকটি মানুষের কাছে তার বাবা-মা হলেন পৃথিবীর সব থেকে আপন। নিঃসন্দেহে একজন বাবা-মায়ের কাছেও সব থেকে দামি ও আদরের বস্তু হলেন তাদের সন্তান।  মানুষের শুধুই বড় একটা পরিচয় নয়, সঙ্গে অনেক বড় দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়। কারণ আমরা জানি, একজন শিশু ছোট থেকে যেমন পরিবেশে বড় হয়, যেগুলো সে দেখতে পায়, শুনতে পায়, তাই সে শিখে নেয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বাবা-মায়ের অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য হলো তার সন্তান জন্মের পর থেকে তাকে একটা সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ দেওয়া, যেখানে অপূরণীয় চাহিদা থাকতে পারে কিন্তু থাকবে না কোনো উচ্ছৃঙ্খল জীবনবোধ, অনৈতিক কার্যক্রম, হিংসা, লোভ খারাপ অভ্যাস; যা আমাদের সভ্যসমাজের পরিপন্থি কোনো আচার-আচরণ।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরিক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত-৮)

 

লেখক : শিক্ষার্থী, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, টঙ্গী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads