সম্পাদকীয়

ম্লান হলো ডাকসুর গৌরব

সক্রিয় হোক ছাত্ররাজনীতির প্ল্যাটফর্ম

  • প্রকাশিত ১৩ মার্চ, ২০১৯

সব জল্পনা-কল্পনা, হতাশা-নিরাশার আঁধার কাটিয়ে, অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী ছাত্ররাজনীতির তীর্থকেন্দ্র ডাকসু নির্বাচন। তবে ভোট শুরু হওয়ার আগে থেকে শেষ পর্যন্ত নানা অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলায় ম্লান হয়ে গেছে উৎসব। কারণ বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। একটি আনন্দঘন, অবিতর্কিত ভোট উৎসবের অপেক্ষায় ছিল শিক্ষার্থীরা। সচেতন দেশবাসীও উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন এই নির্বাচনটির জন্য। যদিও ২৮ বছর পর ভোট হলো উৎসবমুখর পরিবেশে। ৪৩ হাজার ২৫৫ জন ভোটারের সমর্থন প্রত্যাশী হিসেবে ১৩টি প্যানেলে ভিপি পদে ২১ জন, জিএস পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বহু কাঙ্ক্ষিত এই নির্বাচনে ছাত্রলীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভের পাশাপাশি নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ভোট বর্জন করেছে ছাত্রদল।

বলতে দ্বিধা নেই, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তা হতাশা ও অনাস্থার মধ্য দিয়ে শেষ হলো। প্রায় তিন দশক পর ডাকসুর নির্বাচন হওয়াটা একটা বড় প্রাপ্তি হলেও এর মাধ্যমে কোনো সুফল পেল না জাতি। ভোটের দিন একটি হলে বস্তাভর্তি ব্যালট পেপার উদ্ধারের ঘটনা নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার অভিযোগ উঠেছে। ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে এতসব ঘটন-অঘটনের পরও কর্তাব্যক্তিরা কেন যথাযথ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হলেন। দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশবাসীর, বিশেষত শিক্ষার্থী বা তরুণ সমাজের প্রত্যাশার হাঁড়ি ভেঙেছে হতাশায়। এ বিষয়ে আরো সচেতন থাকার প্রয়োজন ছিল এবং দায়িত্বশীলরা সঠিক ভূমিকা নিতে পারেননি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্যানেল নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে উৎসবে মেতে উঠলেও অন্যান্য প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে ব্যালট পেপারে কোনো সিরিয়াল নম্বর ছিল না। বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের এই অনিয়মের ঘটনাগুলো আমাদের লজ্জিত করেছে। এ ঘটনা দেশবাসীর কাছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে, যা সার্বিকভাবে একাডেমিক পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে পারে বলে অভিজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। যে বিষয়টি না বললেই নয়, এই নির্বাচনটি হওয়ার কথা ছাত্ররাজনীতির আদর্শিক প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টির লক্ষ্যে। এ নিয়ে আন্দোলন, দাবি, আলোচনা আর লেখালেখি হয়েছে অনেক। অবশেষে নির্বাচনটি ঠিকই হলো। সবাই অংশগ্রহণ করল; কিন্তু নির্বাচনের বিতর্ক থেকে রেহাই পেল না এটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকে কীভাবে বিচার করবে জাতি! সরকারের ভূমিকাকে আবারো প্রশ্নে ফেলে দিল এই নির্বাচন। জাতির জন্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে নির্বাচনটি ইতিহাসের নতুন দরজা খুলে দিতে পারত, সেটি এখন বিতর্কের প্রশ্নবাণে জর্জরিত! আফসোস, আমরা ডাকসুর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারলাম না। তবে এখন ঢাবি কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের ওপর দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। উত্থাপিত অভিযোগগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করা। ডাকসুর ঐতিহ্য রক্ষায় পরবর্তী নির্বাচনকে অবিতর্কিত রাখতে এখন থেকেই প্রস্তুতি-পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। একই সঙ্গে ডাকসুর নির্বাচনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আর স্বচ্ছতার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে আদর্শহীন রাজনীতির ধারা থেকে বাংলাদেশ আর বের হয়ে আসতে পারবে না। তাই সৎ, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক চর্চার এই তীর্থকেন্দ্রকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads