মুক্তমত

সংস্কৃতির গতিপথ কোন দিকে

  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০

আশিকুর রহমান

 

সময়ের পরিবর্তনের সাথে মানুষের আচার-আচরণ ও রুচিও পরিবর্তনশীল, এটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক তখনই বলা হবে, যখন মানুষ পরিবর্তিত হয়ে অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়, ভালোটা ছেড়ে মন্দের দিকে যায়। পরিবর্তনের পালাবদলে মানুষ তার সংস্কৃতির শেকড় ভুলে যায়, তখন সেটাই অস্বাভাবিক।

বাঙালির সংস্কৃতি বা আচার-আচরণ, রুচি এক সময় সমৃদ্ধ ছিল, খুব দ্রুত বিবর্তনে আজ যে স্থানে আমরা দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে, বর্তমানের এই সংস্কৃতিকে আর সমৃদ্ধ বলা চলে না। পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে আচার-অনুষ্ঠান সবকিছুতেই আমূল নেতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। হ্যাঁ, ইতিবাচক পরিবর্তনও হয়েছে; কিন্তু তা খুবই নগণ্য। আধুনিকতার নামে অসুস্থ এক সংস্কৃতির দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি।

সামাজিকীকরণের যে প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে আমরা সংস্কৃতি শিখছি, সেটাই ভুল। অর্থাৎ আমরা শিখছিই ভুল সংস্কৃতি। বর্তমান প্রচার মাধ্যম বা বিনোদন মাধ্যম অর্থাৎ টিভি চ্যানেলগুলো বিভিন্নভাবে আমাদের অপসংস্কৃতির দিকে ঢেলে দিচ্ছে। বিনোদন মাধ্যমের সেই সোনালি অতীত এখন আর নেই। সত্তরের দশক বা আশির দশকে যে ধরনের সিনেমা, সংগীত আমাদের সামনে পরিবেশন করা হতো, সেগুলো থেকে কিছু শেখা যেত, জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ ও অন্তর আত্মার পরিপুষ্টি সম্ভব হতো। তখনকার সময়কার সিনেমা, নাটক আর গানগুলো গুণী একদল মানুষের তত্ত্বাবধানে নির্মান ও পরিবেশন করা হতো। শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, তারেক মাসুদ, হুমায়ূন আহমেদের মতো গুণী লেখক ও নির্মাতাদের দ্বারা নির্মিত  হতো— সংসপ্তক, হাজার বছর ধরে, জীবন থেকে নেওয়া ও কোথাও কেউ নেই-এর মতো কালজয়ী সিনেমা ও নাটকগুলো। গানগুলোও নির্মাণ করত তারা এবং তাদের মতো আরো একদল গুণী লেখকের হাতে, অন্য এক দল গুণী সুরকারদের দ্বারা সুর করে, কোকিলকণ্ঠী রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, আহম্মেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, সুবীর নন্দী ও এন্ড্রু কিশোরের মতো একঝাঁক গুণী শিল্পীদের দ্বারা সেই গান আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হতো। সেই সময়ের সেই গান,সিনেমা বা নাটকগুলো দর্শকমনে দাগ কাটত, মানুষের মনে সুর জাগাত। এখনকার সময়ের অর্থহীন অশালীন সংলাপ আর খোলামেলা পোশাকের সিনেমা, নাটক বা গান থেকে আমরা শুধু অপসংস্কৃতিই শিখতে পারছি। বিনোদনের জগৎটা অপসংস্কৃতি শিক্ষার হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে।

প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, অসুস্থ রুচিবোধ, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়, অর্থকে কেন্দ্র করে আজ নির্মিত হচ্ছে সিনেমা, নাটক আর গান। শুধু পরিচিত মুখ হওয়া আর অর্থের নেশায় তারা অর্থাৎ যারা বর্তমানের এই অসুস্থ সিনেমা, নাটক বা গানগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত, তারা যে শুধু নিজেদেরই নিচে নামছে তা কিন্তু নয়, তারা এক অসুস্থ সংস্কৃতি শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে পুরো সমাজ বা জাতিকে নিচের দিকে নামিয়ে দিচ্ছে। কেননা তাদের শিক্ষা দেওয়া এই অপসংস্কৃতিকে লালন করেই বড় হচ্ছে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম। এগুলোকে কেন্দ্র করে গঠিত হচ্ছে তাদের চিন্তা ও চেতনার জগৎ। ভবিষ্যতেও তাই হবে। আধুনিকায়ন বাঞ্ছনীয় কিন্তু আধুনিকতার নামে অসুস্থ, রুচিহীন সংস্কৃতি বাঞ্ছনীয় নয়। এ থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন। আর এ থেকে পরিত্রাণের জন্য, সামাজিক সচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে যে, সুস্থ-সুন্দর সমাজ জীবন গঠনে সুস্থ-সুন্দর সংস্কৃতি চর্চা করা প্রয়োজন।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads