শৈশবে শুরু হোক নৈতিকতা শিক্ষা

সত্য বলায় শিশুকে সাহায্য করুন

ছবি : ইন্টারনেট

ফিচার

শৈশবে শুরু হোক নৈতিকতা শিক্ষা

  • প্রকাশিত ৮ জুলাই, ২০১৮

ফারজানা বীথি

শিশুকাল হলো নৈতিকতা আর মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারণ এ শিক্ষাই তার সারা জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে। তাই প্রাক-স্কুলগামী বয়স থেকে শিশুকে  নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। ছোটবেলার এই মূল্যবোধগুলো শিশুকে বড় মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

অন্যকে সম্মান করা : শিশুর নৈতিকতা বা মূল্যবোধের শিক্ষায় যে শিক্ষাটি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি তা হলো, মানুষকে সম্মান করার শিক্ষা- হোক সে গুরুজন বা ছোট। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষাটা শিশুরা বাড়ির লোকজনকে দেখেই শিখে থাকে। তাই অন্যকে সম্মান করার প্রবণতা নিজেদের  মধ্যে তৈরি করতে হবে সবার আগে। পরিবারের প্রতিটি লোকের প্রতি তো বটেই, সম্মান দেখাতে হবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিও। বাসার গৃহকর্মী, দারোয়ান, ড্রাইভার এদের সঙ্গে আপনার ব্যবহার যদি খারাপ হয়, তাহলে আপনাকে দেখে আপনার সন্তানও একই আচরণ শিখবে।

সততা : নৈতিকতা শিক্ষার মূল ভিত্তিই হলো সততা। শিশুকে ছোটবেলা থেকেই সত্য বলার শিক্ষা দিন এবং তাকে বিভিন্ন সময় সত্য বলার জন্য পুরস্কৃত করুন। শিশুরা সাধারণত ছোটখাটো ভুলভ্রান্তিতে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এমন ছোট ছোট মিথ্যা বলার মধ্য দিয়ে এটি একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়। তাই শিশুর ছোটখাটো ভুলে তাকে বকা বা মারধর না করে তার এমন আচরণের পেছনের কারণ জানার চেষ্টা করুন। তাকে বলার সুযোগ দিন। এতে সে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। সত্য বলায় তাকে সাহায্য করুন।

বিচার-বিবেচনা শিক্ষা : ভালোমন্দের পার্থক্য করার শিক্ষাটি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই দিন। প্রতিটি কাজের ভালো ও মন্দ দিকটি শিশুর সামনে তুলে ধরুন। ইদানীং বিভিন্ন কার্টুন থেকে শিশুরা নেতিবাচক শিক্ষা নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কার্টুন চরিত্রটির ভালো ও মন্দ দিকটিও শিশুকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। অন্যায় করলে ভুল স্বীকার করতে হয়, শিশুকে এ শিক্ষাও দিন। 

নম্রতা ও ভদ্রতা : একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে তৈরি হওয়ার জন্য নম্রতা ও ভদ্রতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নৈতিকতা শিক্ষায় এটিকে কম গুরুত্ব দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য তাকে সবসময় উৎসাহিত করুন। বড়দের সঙ্গে তো বটেই, ছোটদের সঙ্গেও বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা দিন। ক্ষমা চাওয়ার শিক্ষাটিও এ বয়সে দেওয়া উচিত। ধর্মীয় শিক্ষাও শিশুকে নমনীয় হতে সহায়তা করে। 

দায়িত্ববোধ : ছোট বলে আমরা শিশুকে তার সব কাজে সহায়তা করার চেষ্টা করি। কিন্তু আপনি কি জানেন দায়িত্ববোধের শিক্ষাটি দেওয়ার উপযুক্ত সময় এই শিশুকালই। নিজের ছোটখাটো কাজগুলো তাকেই করতে দিন। নিজের কাপড়, খেলনা, বইখাতাগুলো গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি ছোট ছোট কাজ তাকে করতে দিন। এই কাজগুলো তার মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করবে। বাড়িতে ছোট ভাইবোন থাকলে তার প্রতি খেয়াল রাখার দায়িত্বটিও তাকে দিন। অন্যকে সাহায্য করার শিক্ষাও শিশুর মধ্যে থাকা প্রয়োজন।

ধৈর্য : শিশু যাতে অল্পতেই রেগে না যায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকুন। কোনো কাজে সফল হতে বার বার চেষ্টা করার প্রতি উৎসাহিত করুন। তাকে বোঝান সাফল্য পেতে হলে সবসময় ধৈর্য ধারণ করতে হয়। তাই কোনো বিষয়ে বিফল হলে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরে আবার চেষ্টা করতে বলুন।

ভালোবাসা : শিশুর নৈতিকতা শিক্ষায় অন্যকে ভালোবাসার শিক্ষাটিও দিন। শিশুটি যখন তার চারপাশের জগৎকে ভালোবাসতে শিখবে, তখন অন্যান্য মানবিক গুণাবলি তার মধ্যে আরো ভালোভাবে বিকশিত হবে। শুধু পরিবারের সদস্যদের জন্য নয়, সব মানুষ ও প্রাণির জন্যও ভালোবাসা তৈরি করুন।

শেয়ার করা : সব জিনিস অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলুন। এই অভ্যাসটি তার মধ্যে হিংসা সৃষ্টি হওয়া থেকে বিরত রাখবে। তাই নিজের খেলনা, খাবার এমনকি ছোট চকোলেটও ভাইবোনদের সঙ্গে শেয়ার করার অভ্যাসটি গড়ে তুলুন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads