শীতে জমে ওঠে পিঠাপুলির দোকান

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

শীতে জমে ওঠে পিঠাপুলির দোকান

  • মো. শফিকুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

ক্যাম্পাসে শীতের দিন সকাল ও সন্ধ্যায় বসে ছোট ছোট পিঠা দোকান। পিঠা খেতে দোকানগুলোতে ভিড় জমায় শিক্ষার্থীরা। শীতের আগমনে আসলেই ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে চলে নানা প্রস্তুতি। নানা ধরনের পিঠাপুলি আর মাণ্ডা মিঠাই শীত মৌসুমে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। কিন্তু গ্রামবাংলার এই আয়োজন থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই শহরের ক্যাম্পাসগুলো। শীতের উষ্ণতা খোঁজা ও আড্ডা একই সঙ্গে জমে ওঠে ক্যাম্পাসের পিঠাপুলির দোকানগুলোতে।

হিমশীতল বাতাস। চারদিকে কুয়াশার সাদা চাদর। অনেক সময় সূর্যমামার দেখা নেই। সারাদিনে একবারো উঁকি দেননি তিনি। মৃদু ছন্দে ঝরেপড়া শিশির। কনকনে শীত। গরম ভাপা পিঠা। ঝরা পাতা। পাখির গান সবই জানান দেয় শীত এলো রে! এভাবেই প্রতি বছর শীত আসে। শীতের এই ছোঁয়া লাগে ক্যাম্পাসেও। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শীত উপভোগের রূপটি কিছুটা অন্যরকম। প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে রোদে আড্ডা দেওয়ার মাঝেই যেন সব সুখ। প্রাইমারি স্কুলজীবনে প্রিয় ঋতু নিয়ে রচনা লেখার সময় সবাই শীতকে প্রিয় ঋতু হিসেবে লিখত। শীতের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আর সজীবতা যার অন্যতম কারণ। ক্যাম্পাসজীবনে শীত আসে শিক্ষার্থীদের মাঝে আনন্দের বার্তা নিয়ে। শিক্ষার্থীদের বাহারি রঙের আর ডিজাইনের শীতের গরম কাপড়ের ফ্যাশন বলেই দেয় সেই কথা।

ক্যাম্পাসে শীত মানে দেরি করে ক্লাসে যাওয়া, বন্ধুদের নিয়ে পিঠা খাওয়া আর রঙ-বেরঙের পোশাক পরে একসাথে মিলে আড্ডাবাজি। শীতের রাতে বনভোজন আরো কত কী! এ ছাড়া মাঠে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিয়ে সময় কাটানোর উপযুক্ত সময়। আড্ডাবাজদের প্রিয় জায়গাগুলোতে আড্ডা দেওয়ার পাশাপাশি বিকাল অথবা সকালের নরম রোদ উপভোগ। তবে কষ্টদায়ক ব্যাপার হলো শীতের সকালে ক্লাস। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লাসটা অনেকেই করতে চায় না। আবার অনেক সময়ই মিস হয়ে যায়। রাত দশটার পরে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে হলের বাইরে থাকে না। সন্ধ্যা হলেই সবাই হলের গেম রুমে সময় কাটায়। শীতের কারণে শিক্ষার্থীরা টেবিল টেনিস, ক্যারম, দাবা, কার্ড খেলার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। এই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোর চিত্র অনেকটা এরকমই।

পড়ন্ত বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি চত্বরে পিঠা খেতে খেতে কথা হয় রায়হান, আশিক, ধ্রুব ও তানজিলার সাথে। সবাই ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা বলেন, ক্যাম্পাসে শীতের পিঠা-পুলির উৎসব বলতে পিঠার দোকানকেই বোঝায়। শীতের পিঠা ছাড়া বাংলার শীত পরিপূর্ণ হয় না। মাটির খোলা তৈরি চিতই পিঠা আর নারিকেল, গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা বন্ধুরা মিলে ক্যাম্পাসের ছোট পিঠার দোকানে যখন পিঠা খাওয়া হয়। তখন ক্ষণিকের জন্য মনে পড়ে যায় গ্রামের বাড়িতে চুলার ধারে বসে মায়ের হাতের পিঠা খাওয়ার কথা। তাই তো পরিবার-পরিজন থেকে শত শত মাইল দূরে ক্যাম্পাস যেন আরেকটা পরিবার।

অন্যান্য ক্যাম্পাস যখন নগরজীবনের যান্ত্রিকতায় পিষ্ঠ তখন ঢাকা শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ক্যাম্পাসগুলোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হয়ে ওঠে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা পিঠার দোকানগুলো। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দোকানে মিলে শীতের বিভিন্ন রকম পিঠা। আর শীতের এই পিঠাপুলির স্বাদ নিতে দোকানে ভিড় জমায় শিক্ষার্থীরা। জাবির শিক্ষার্থীদের জন্য শীত একটু বেশি উপভোগ্য। কেননা অতিথি পাখিরা ক্যাম্পাসে উড়ে আসে সুদুর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাতে টিকতে না পেরে হাজার হাজার পাখি উষ্ণতার খোঁজে বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে, তার মধ্যে জাবি ক্যাম্পাস অন্যতম। এ ছাড়া জাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক রকমের পিঠার দোকান থাকে হাতের কাছেই। শীতের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পিঠা খেতে খেতে আড্ডা খুবই উপভোগ্য। ৫-২০ টাকার মধ্যে সব ধরনের পিঠা কিনতে পাওয়া যায়। পিঠার দোকানে বসে বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা নিয়ে খুনসুটি শুরু হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কে কয়টি পিঠা খেতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতাও হয়ে থাকে। ক্যাম্পাসের বটতলা, বিভিন্ন হলের সামনের দোকান, লাভ ল্যান্ড, চৌরঙ্গী, টার্জান পয়েন্ট, লাইব্রেরি চত্বর, মেডিকেল চত্বর, পরিবহন চত্বর, শহীদ মিনার চত্বর, ক্যাফেটেরিয়া চত্বর ও সেন্ট্রাল ফিল্ডে বসে আড্ডা। জাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ জানান, শীতের পিঠা খাওয়ার সাধ হয়তো ক্যাম্পাসের পিঠা বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে খেয়েও মেটানো যাবে। কিন্তু বাড়িতে পিঠা বানিয়ে সবাই একত্রে পিঠা খাওয়ার আয়োজনের আনন্দ তো তাতে মিলবে না।

সাভারের আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গণবি)। প্রকৃতি ও পরিবেশটা অনেকটাই গ্রামীণ আবহে তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বংশী নদী। এ কারণে শীতের প্রকোপটা অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকেই রয়েছে গ্রাম। আর তাই গণবিতে শীতের আগমন কোনোভাবেই গ্রাম থেকে আলাদা নয়। শীতকালের আড্ডা নিয়ে গণবি’র বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, শীতকালের বন্ধুরা মিলে পিঠাপুলির দোকানের আড্ডাটা সবচেয়ে প্রাণবন্ত হয়। ক্যাম্পাসে শীতের দিনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একাডেমিক ভবনের সামনের পিঠার দোকানগুলো। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দোকানে মিলে শীতের বিভিন্ন রকম পিঠা। আর শীতের পিঠার স্বাদ নিতে সারাক্ষণ দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads