জাতীয়

শীতের তীব্রতা বাড়ছে

শৈত্যপ্রবাহ শুরু, ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ৯ ডিসেম্বর, ২০২০

সারা দেশে শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ-ব্যাধি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভিড় করছেন।  বিনা প্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। তবে জীবিকার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হচ্ছে অনেককেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর যশোরে সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সপ্তাহের শেষে শীতের প্রকোপ আরো বাড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় সারাদিন সূর্যের দেখা মিলেনি। কুয়াশার কারণে দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করতে হয়। অনেক জায়গায় কিছুটা ব্যাহত হয় নৌ-চলাচলও।

কোথাও কোথাও শীতের পাশাপাশি ঠান্ডা মৌসুমি বায়ুর কারণে শীতের প্রকোপ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়ের, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জে শীতের তীব্রতা গত কয়েকদিন ধরে বেড়েই চলেছে। এছাড়া, দেশের অন্য জেলাগুলোতেও শীতের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ।

মঙ্গলবার ঢাকাতে সকালের দিকে ঘন কুয়াশা লক্ষ করা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গিয়ে সূর্যের দেখা মিললেও দুপুরের পর আবারো মৃদু কুয়াশায় দিনের তাপমাত্রা কমে আসে। একারণে গরম কাপড় বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। কেউ যাচ্ছেন শপিংমলে, কেউবা ফুটপাত, ভ্যানে বিক্রি করা শীত নিবারণী কাপড় কিনতে জড়ো হচ্ছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের মঙ্গলবারের তথ্য বলছে, আবহাওয়া শুষ্ক থাকার পাশাপাশি পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর একটি বাড়তি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে হালকা ধরনের কুয়াশা থাকতে পারে। একারণে  এসব এলাকার নৌযান চলাচলে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুরের হিলির বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, প্রচন্ড শীত পড়েছে, প্রতিদিন শীত বেড়েই চলছে। আগে সকাল বেলা উঠতে পারলেও, এখন শীতের কারণে সকালে উঠতে পারছি না। আর শীত বাড়ায় সর্দি-কাশি ও হাঁচি লেগেই আছে, শীতের কারণে আগে যে শারীরিক সুস্থতা ছিল, তা নেই।

ওই জেলারই বাসচালক রেজাউল ইসলাম ও ট্রাকচালক ইসহাক মিয়া বলেন, শীতের পাশাপাশি প্রচন্ড ঘন কুয়াশা শুরু হওয়ায় বাস-ট্রাক যে চালাব তা কষ্টকর হয়ে ওঠেছে। এতই কুয়াশা পড়ছে, যে হেডলাইট জ্বালিয়েও পাঁচ হাত দূরে কি আছে, তা দেখা যাচ্ছে না। এতে করে ধীরে ধীরে যেতে হচ্ছে, এ কারণে সময় যেমন বেশি লাগছে, তেমনি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

হিলির চাষি মোতালেব হোসেন বলেন, শীতকালে খুব কষ্ট। সকাল বেলা উঠে জমি থেকে সবজি তুলে সেগুলো ধুয়ে হাটে নিয়ে আসতে হয়। এতে ঠান্ডা লেগে অসুখ-বিসুখ বাড়ছে।

একই এলাকার ভ্যানচালক বারিক হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু গত দু’দিন ধরে যে শীত পড়েছে, এতে করে সড়কে মানুষের উপস্থিতিও কমে গেছে। এ কারণে ইনকামও কমে গেছে। ঘন কুয়াশায় ঠিকমতো রাস্তাঘাট দেখা যাচ্ছে না।

দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘন কুয়াশা হচ্ছে। তবে এটি বেশি দিন স্থায়ী হবে না। গত কয়েকদিন থেকে আমাদের এই অঞ্চলে ১৪ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তাপমাত্রা আরো কমে ১০ বা এর কাছাকাছি থাকবে বা এর নিচেও নামতে পারে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, কুড়িগ্রামে ৭ ডিসেম্বর সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। তিনি জানান, ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের পরে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নামলেই শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের দিকে গিয়ে শীত শেষ হতে পারে।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান বলেন, এখনও শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। শীতজনিত রোগের রোগীদের জন্য উপজেলা মেডিকেল টিম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অনান্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শীতে সাধারণত সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে অন্যান্য স্বাস্থ্য-সমস্যার বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার। এ সময় জ্বর, অ্যাজমা, গা-ব্যথা, অসাড় ভাবসহ নানা ধরনের সংক্রমণ দেখা দেয়। শীতজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য যেসব খাবারে ভিটামিন সি ও জিংক আছে সেগুলো খেতে হবে।

তিনি বলেন, এ সময় বেশি করে ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। শরীরের ওজন ঠিক রাখতে কিছুটা ঘাম ঝরানো উচিত। বেশি করে ফল ও সবজি খেতে হবে ও শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads