বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা অজুহাতে অর্থ আদায় বন্ধ করতে নির্ধারিত খাত ধার্য করে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের শিক্ষাব্যয় নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া সব ফি ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। এজন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২০ প্রণয়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বছর থেকে এটি বাস্তবায়ন হতে পারে।
নীতিমালার বিষয়ে গতকাল শনিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ নানানভাবে লুটপাটের ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে অর্থব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই। এ কারণে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খসড়া নীতিমালাটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী বছর থেকে এটি কার্যকর হতে পারে। এটি বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন, ভর্তি ফি, সেশন ফি এবং বোর্ড পরীক্ষার ফরমপূরণ ফিসহ যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নীতিমালা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের ফি ও বেতনের অর্থ আদায় করতে হবে। কোনোভাবে তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ আদায় করা যাবে না। আদায়কৃত সব অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলে জমা রাখতে হবে।
এতে এমপিওভুক্ত সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ আদায়ের খাত তৈরি করা হয়েছে। সেসব খাতে অর্থ নির্ধারিত থাকবে। তার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন ও তার আশপাশ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির মাসের বেতন ২৫ থেকে ৪৫ টাকা, জেলা সদর ও পৌর এলাকায় ২০ থেকে ৪০ টাকা, উপজেলায় ১৫ থেকে ৩৫ এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ১২ থেকে ৩০ টাকা নির্ধারিত থাকবে। ভর্তির আবেদন ফি পর্যায়ক্রমে ৭৫ থেকে ২০০ টাকা করা হবে। ভর্তি ও পূর্ণ ভর্তি ফি ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা ধার্য থাকবে।
শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফিও ধার্য করা হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরে দুই পরীক্ষার জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা নেওয়া যাবে। এছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাবদ ৫০, ম্যাগাজিন ফি ১০০, মুদ্রণ বাবদ ১৫০, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক ও বিভিন্ন দিবস উদযাপনে ৫০ থেকে ৭৫, কম্পিউটার চার্জ ২৫ থেকে ৫০, কৃষি ও বাগান ফি (যদি থাকে) ৩০, কমন রুম ফি ২০ থেকে ৩৫, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫, বিএনসিসি ফি ৫, রেডক্রিসেন্ট ফি ২০, মসজিদ ও উপাসনালয়ের জন্য ২৫ থেকে ৫০ টাকা ধার্য করা থাকবে।
অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি, পরীক্ষার ফি, ব্যবহারিক পত্রের ফি, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি, মূল সনদ ফি শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্ধারণ করবে। এছাড়া স্কাউট ফি, ক্রীড়া, কল্যাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফি বোর্ড থেকে নির্ধারণ করে দেবে। উন্নয়ন ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী আদায় করা যাবে।
কলেজ পর্যায়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসের বেতন ৮০ থেকে ১৫০ টাকা, অনলাইন আবেদন, রেজিস্ট্রেশন ফি, উন্নয়ন ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারণ করা থাকবে। প্রতি বিষয়ে অভ্যন্তরীণ ফি ৫০ থেকে ৪০ টাকা আদায় করা হবে। তবে প্রতি বিষয়ে, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, সনদ, পরীক্ষা কেন্দ্র, রোভারস্কাউট, ক্রীড়া, রেডক্রিসেন্ট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফি, বিএনসিসি ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে।
নীতিমালায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা থাকছে। এর বাইরে কল্যাণ ফি বাবদ ২০, পরিচয়পত্র ফি ৩০, লাইব্রেরি ফি ২৫, ল্যাবরেটরি/বিজ্ঞানাগার ফি ১০০, আইসিটি ফি ২০, ম্যাগাজিন খাতে ৩০, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যয় ৩০, সাংস্কৃতিক, বির্তক ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা থাকবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়সংক্রান্ত এ খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মাসের বেতন নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। নগদ অর্থ আদায় করতে পারবে না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এজন্য সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকে হিসাব চালু করতে হবে। এমপিওভুক্ত স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি এবং কলেজে গভর্নিং বডির সভাপতির নেতৃত্বে তিনজন সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি অর্থ কমিটি গঠন করতে হবে। কলেজের সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট বেতন ও ফি আদায় কমিটি সব ধরনের ফি এবং বেতন আদায় সম্পর্কিত মাসের প্রতিবেদন কমিটি বরাবর দাখিল করবে।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২০ প্রণয়ন নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপত্বিতে এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।