শতবর্ষী ষাটগম্বুজ মসজিদ

ষাটগম্বুজ মসজিদ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

শতবর্ষী ষাটগম্বুজ মসজিদ

  • মো. শফিকুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ নিয়ে গবেষণা, অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ কম হয়নি। বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এটি। এটি বাংলাদেশের স্মারকও। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম চিত্তাকর্ষক নিদর্শন মসজিদটি। মসজিদটি নিয়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হয় নতুন নতুন গল্প। উপমহাদেশের বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক হজরত খানজাহান আলী (র.) ১৪৪০ সালে নির্মিত করেন। মসজিদের গম্বুজ কয়টি তা নিয়েও মানুষের আগ্রহের এখনো শেষ নেই।

অতুলনীয় নকশার এক মসজিদ। প্রচলিত অর্থে কোনো ছাদ নেই। অর্ধডিম্বাকার ও আয়তাকার গম্বুজগুলোই ছাদ। এ জন্যই একে ‘ছাদগম্বুজ’ মসজিদও বলা হতো। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেছে ‘ষাটগম্বুজ’। বাগেরহাট শহর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে সুন্দরঘোনা গ্রামে ষাটগম্বুজ মসজিদের অবস্থান। সুলতানি আমলের অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদ বাগেরহাট শহরের অন্যতম আকর্ষণ। ষাটগম্বুজ ছাড়াও অসংখ্য মসজিদ, দিঘি ও স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন হজরত খানজাহান (র.)। বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন হারিয়ে যাওয়া বিশ্বের যে ১৫টি শহরের তালিকা করেছে, তাতে রয়েছে এই শহরের নাম। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর (Historic mosque city of Bagerhat) হিসেবে ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহানের স্থাপত্যগুলোকে তালিকাভুক্ত করে।

নামকরণ : মসজিদটির নাম আদতে কী ছিলো তা সঠিকভাবে এখনো জানা যায়নি। পণ্ডিত ও গবেষকদের দুটি মতো পাওয়া যায়, ষাটগম্বুজ মসজিদে আসলে গম্বুজ রয়েছে ৭০টি। ৭টি রয়েছে চৌচালা গম্বুজ, যা গম্বুজের যথাযথ সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। চার কোনায় রয়েছে চারটি মিনার, যা ইসলামে বিজয়ের প্রতীক। এর মাথায় যে চারটি গম্বুজ রয়েছে একে গম্বুজ না বলে অনুগম্বুজ বলা যায়। সে হিসেবে প্রকৃত গম্বুজ ৭০টি। আর সব মিলিয়ে মোট গম্বুজ আছে ৮১টি। ঐতিহাসিক বিদদের অনেকে মনে করেন, এই ৬০টি খাম্বাজের কারণে মসজিদটির নাম হয় ‘ষাটখাম্বাজ’। আর খাম্বাজ শব্দটি বিবর্তিত হয়ে ‘ষাটগম্বুজ’ নামটি এসেছে। আবার সাতটি গম্বুজের সারি থেকে ‘সাতগম্বুজ’ এবং তা কালের বিবর্তনে ‘ষাটগম্বুজ’ হয়েছে বলেও মনে করেন।

অতুলনীয় নকশা : মসজিদে সাত সারির ২১টি কাতারে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। নারীদের নামাজের জন্য রয়েছে আলাদা স্থান। অথচ এত বড় মসজিদে আলো-বাতাসের কোনো অভাব নেই। অনন্য নকশার কারণে কৃত্রিম আলো-বাতাসের দরকার পড়ে না বললেই চলে। দৈর্ঘ্যে ১৬৮ ফুট ও প্রস্থে ১০৮ ফুটের এই মসজিদেও দেয়ালগুলো ৮ ফুট করে। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে ছয়টি করে ছোট ও একটি করে বড় খিলান। পূর্ব পাশে একটি বড় ও তার দুই পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান।

ষাটগম্বুজ মসজিদের ভেতরে ৬০টি পিলারই পাথরের তৈরি। চুন, সুরকি, কালো পাথর ও ছোট ইট দিয়ে পুরো মসজিদটি তৈরি। এই মসজিদের স্থাপত্যকলার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার তুরস্ক স্থাপত্যশৈলীর বিশেষ মিল রয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এ মসজিদটি দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় জমায় প্রতিবছর। ডিসেম্বর থেকে মার্চ সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯২৩ সালে ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রথম সংস্কারকাজ হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে দক্ষিণ এশীয় পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ষাটগম্বুজ মসজিদটির সংস্কারকাজ হয়েছে। মসজিদটি বলা হয়ে থাকে মুসলিম বাংলার স্বর্ণযুগের প্রতিনিধিত্বকারী। মসজিদটির সাথেই রয়েছে দুটি পুকুর ঘোড়াদিঘি ও দারগাদিঘি। মসজিদ, জাদুঘর, দিঘিসহ এটি এখন কমপ্লেক্স। ৪০ একর আয়তনের বিশাল দিঘি। ঘোড়াদিঘি নামে বেশি পরিচিত হলেও ষাটগম্বুজের দিঘি নামেও চেনেন অনেকে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সংরক্ষিত জলাশয়। ঐতিহাসিক এ দিঘি লাল শাপলায় ভরপুর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads