ফারজানা বীথি
শিশু পড়াশোনায় মনোযোগী নয়- এমন অভিযোগ প্রায় প্রত্যেক অভিভাবকের। মোবাইল, ল্যাপটপ, গেমস ইত্যাদির প্রতিই এখন তাদের মনোযোগ। যা পড়াশোনায় শিশুর মনোযোগ নষ্ট করে দিয়েছে অনেকটাই। শিশুকে লেখাপড়ায় মনোযোগী করে তুলতে হলে পড়াটা যাতে শিশুর জন্য আনন্দদায়ক হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে পড়া শিশুর পক্ষে বিরক্তিকর। কিছুটা কৌশলী হলেই শিশুকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়।
১. একটি সহজ রুটিন তৈরি করুন
দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চাদের পড়ার টেবিলে বসিয়ে রাখলেই যে শিশুর পড়া হবে, তা কিন্তু ঠিক নয়। এতে বরং তার মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে। তাই শিশুর জন্য এমন একটি রুটিন তৈরি করতে হবে, যাতে প্রতি এক ঘণ্টা পরপর দশ-পনেরো মিনিটের একটি ব্রেক থাকবে। এতে করে দীর্ঘক্ষণ পড়ার টেবিলে বসে থাকার একঘেয়েমি কাজ করবে না। থাকবে না অতিরিক্ত সময় ধরে পড়ার দুশ্চিন্তা। এ ছাড়া এক বসায় একটানা পড়ে একটা চ্যাপ্টার শেষ করা বিরক্তিকর। তাই একটি চ্যাপ্টার ভাগ করে পড়ার ব্যবস্থা করুন।
২. পড়ার জায়গাটি হোক নিরিবিলি
আপনার সন্তানের পড়ার টেবিলটি সেট করার আগে খেয়াল রাখুন, যাতে জায়গাটি নিরিবিলি হয়। পড়ার জন্য এমন একটি জায়গা নির্ধারণ করতে হবে, যেখানে খুব বেশি যাতায়াতের প্রয়োজন হয় না। টেলিভিশন বা পাশের রুমের লোকজনের কথা যেন পড়ার সময় শিশুর কানে না আসে। কেননা এতেও শিশুর মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। তাই যতখানি সম্ভব পড়ার জায়গাটি হতে হবে কোলাহলমুক্ত।
৩. হাতের কাছে থাকুক সব উপকরণ
পড়তে বসে শিশুরা এটা-ওটা আনার বাহানায় বার বার পড়ার টেবিল থেকে উঠে যায়। তাই পড়ার সময় প্রয়োজনীয় পেনসিল, কলম, রাবার, শার্পনার, স্কেল ইত্যাদি পড়ার টেবিলে হাতের কাছে রাখতে হবে। এ ছাড়াও শিশুর পড়ার টেবিলের পাশেই রাখতে পারেন হালকা স্ন্যাক্স, যেমন- বিস্কুট, চানাচুর ইত্যাদি। কেননা অনেক শিশুরই পড়ার সময় ক্ষুধা পায়।
৪. মনোযোগ নষ্ট হয় এমন জিনিস দূরে রাখুন
পড়ার সময় মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এমন জিনিস দূরে রাখা বা সরিয়ে রাখা উচিত। টিভির সাউন্ড পড়ায় মনোযোগ নষ্ট হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
৫. সহজে মুখস্থ হওয়ার জন্য কিছু উপায়
বাচ্চারা যাতে সহজেই পড়া বুঝে ও মুখস্থ করতে পারে সে জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। ছোটরা যাতে সহজে পড়া বুঝতে পারে, এজন্য গল্পের মাধ্যমে বা ছবি এঁকে পড়া বোঝাতে পারেন। এতে পড়তে মজা লাগে এবং পড়া একঘেয়ে না লাগে।
নোট করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
নোট করার সময় বিভিন্ন পয়েন্ট কালার পেন দিয়ে লিখলে সহজে চোখে পড়বে, দেখতেও ভালো লাগবে।
প্রতিদিন কী শিখেছে তা আপনাকে একবার এমনভাবে বোঝাতে বলবেন, যেন আপনি ছাত্র ও আপনার সন্তান শিক্ষক। এতে সারাদিনের পড়া একবার রিভিশন দেওয়া হয়ে যাবে।
৭. পড়া ধরুন কুইজের মাধ্যমে
আপনার সন্তান আজ কী কী শিখল তা এমনভাবে কুইজের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করুন যাতে সে বুঝতেও না পারে আপনি তার পড়া ধরছেন। শিশু যা পড়বে তা সঙ্গে সঙ্গে লিখতে এবং জোরে উচ্চারণ করতে উৎসাহিত করুন। বাচ্চাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুলুন। কেননা পড়া মুখস্থ করায় এটি বেশ কার্যকর পদ্ধতি।
৮. পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখুন
সন্তানকে পড়ায় উৎসাহিত করতে মাঝে মাঝে পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন। তবে দামি কোনো পুরস্কার না হওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে পুরস্কারের ধরন হতে পারে এমন- আজ যদি ৩০ মিনিট বেশি পড়, তাহলে কাল ৩০ মিনিট বেশি খেলতে দেব বাইরে বা যদি ৬টার মধ্যে এই পড়া শেষ করতে পার, তবে বিকালে তোমার প্রিয় নাস্তা বানাব ইত্যাদি।