রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৬ নভেম্বর, ২০১৮

টেকসই বনায়ন প্রকল্পে সাড়ে ১৭ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পের মাধমে ৭৯ হাজার হেক্টর জমি বনায়নের আওতায় আনা হবে। বননির্ভর প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বিকল্প আয়ের সংস্থান করা হবে প্রকল্পটির মাধ্যমে। উপকূলের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে সংঘাতে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়া এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। রোহিঙ্গা শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সেকেন্ড রিসিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক-২) প্রকল্পে বাড়তি আড়াই কোটি ডলার অনুদান দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সব মিলিয়ে দুই প্রকল্পে ২০ কোটি ডলারের সহায়তা চুক্তি করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

গতকাল সোমবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ভারপ্রাপ্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান চুক্তিতে সই করেন। এ সময় বিশ্বব্যাংক, ইআরডি ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি অনুষ্ঠানে কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, নিজেদের বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। স্থানীয় লোকজনের অধিকাংশ অসচ্ছল হলেও তারা বাস্তুচু্যুত রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানিয়েছে। তারা খাদ্য ও সম্পদের ভাগ দিয়েছে রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের উন্নয়নে অর্থ সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এ সহায়তা রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টায় গতি আনবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ সময় মনোয়ার আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সহায়তা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংক সব সময় পাশে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

চুক্তি অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এশিয়ার মোট স্থলভাগের গড়ে ২৬ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। বাংলাদেশে এর হার মাত্র ১১ শতাংশ। সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে বন সৃষ্টি করা হবে। বনভূমির পরিমাণ বাড়িয়ে দেশটির জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানো হবে। বনের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে প্রকল্পের আওতায়।

এতে আরো বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়ার কারণে কক্সবাজারে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় জেলাটিতে ১৯ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে নতুন বন সৃষ্টি করা হবে।

সহজ শর্তে ঋণ দানে সহায়ক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিল থেকে এ ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করাতে হবে। ঋণের রেয়াতকাল ধরা হয়েছে ৫ বছর। রেয়াতকাল পরবর্তী সময়ে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের সুদের হার ধরা হয়েছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। তা ছাড়া রেয়াতকালের পরবর্তী সময়ে অনুত্তোলিত অর্থের দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি পরিশোধ করতে হবে।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৩ সাল থেকে চলে আসছে রস্ক প্রকল্প। চলতি বছর পর্যন্ত এতে ১৩ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে সংস্থাটি। নতুন চুক্তির আওতায় অতিরিক্ত আড়াই কোটি ডলার আসবে অনুদান হিসেবে।

প্রকল্পটির আওতায় কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শিশুসহ অন্যদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া পাঠ্যপুস্তক ও উপকরণ সামগ্রীর পরিকল্পনা, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মহিলা শিক্ষক নিয়োগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য নতুন শিক্ষা কেন্দ্র তৈরি ও বিদ্যমান শিক্ষা কেন্দ্রকে সহায়তা দেওয়া, ক্যাম্পের শিক্ষা কেন্দ্রের জন্য শিক্ষক ও প্রশিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়োগকৃত শিক্ষক ও প্রশিক্ষকের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা ও টেকনাফ উপজেলার শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে প্রকল্পটির মাধ্যমে। রোহিঙ্গাদের শিক্ষার জন্য কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার সাধন ও পর্যবেক্ষণমূলক কার্যক্রম এবং  সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমও নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads