ফিচার

রাশিয়াসংশ্লিষ্টতায় ট্রাম্পের স্বস্তি

  • অলোক আচার্য
  • প্রকাশিত ৬ এপ্রিল, ২০১৯

বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ ওঠে। ট্রাম্পের মার্কিন মসনদের ক্ষমতায় আসা যেন বেশ নাটকীয়। কারণ সে সময় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ছিলেন বেশ শক্ত অবস্থানে।  বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত জরিপেও এগিয়ে থাকেন হিলারি ক্লিনটন। তাই যখন নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হন, তখন অভিযোগ ওঠে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার। রাশিয়াও বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এ নিয়ে জল ঘোলা কম হয়নি। বহুবার এ নিয়ে ট্রাম্প মুখোমুখি হয়েছেন সাংবাদিকদের। প্রতিবারই বেশ কৌশলে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পবিরোধীদের এসব আলোচনা-সমালোচনায় জল ঢেলে দিয়েছেন রবার্ট মুলার। যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প-রাশিয়া ষড়যন্ত্রের যে তদন্ত শুরু হয়েছিল, সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তার প্রচারণা টিমের কেউ রাশিয়ার সঙ্গে মিলে কোনো ষড়যন্ত্র করেননি বা এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্পেশাল কাউন্সিল বা বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার তার প্রতিবেদনে। নির্বাচনে ট্রাম্পের রুশ সংযোগ তদন্তের জন্য বিশেষ কৌঁসুলি নিযুক্ত হওয়ার ২২ মাসের মাথায় এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন রবার্ট মুলার। মার্কিনিদের কাছে এই প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

শুধু মার্কিন রাজনীতিতেই নয়, বিশ্বের প্রতিযোগী দেশগুলোর ট্রাম্পবিরোধী রাজনীতিবিদরাও বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী ছিলেন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য স্বভাবতই রিপাবলিকানরা আনন্দিত হয়েছেন এবং ডেমোক্র্যাটরা হতাশ। তবে এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ট্রাম্প তার পদ ব্যবহার করে বিচার বাধাগ্রস্ত করেছেন কি-না, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি মুলার। আবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও দেননি। অব্যাহতি না দিলেও এই মারাত্মক অভিযোগ থেকে আপাত মুক্তি মেলায় সবচেয়ে খুশি ট্রাম্প। কারণ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ওঠে। সবচেয়ে বড় অভিযোগটির সুরাহা হওয়ায় প্রেসিডেন্টেরই বেশি খুশি হওয়ার কথা।

রাশিয়ার সঙ্গে প্রথম দিককার সেই সুসম্পর্কও এখন নেই। সেটা না থাকাটাই স্বাভাবিক। দু’দেশের সম্পর্ক সেই আগে থেকেই খুব ভালো তা বলা যায় না। দুই দেশই বিশ্বের শক্তিশালী পরাশক্তি। দুই দেশেরই মিত্রপক্ষে শক্তিশালী দেশ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন বিষয় নিয়েই মতভিন্নতা দেখা যায়। গণমাধ্যমের সঙ্গেও সম্পর্ক সুখের নয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সাংবাদিকদের সঙ্গে বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন। মার্কিন মুলুকের নির্বাচন নিয়ে এত সমালোচনা এর আগে সম্ভবত কোনো নির্বাচনে হয়নি। তারপর জলবায়ু ফান্ডে অর্থায়ন, অভিবাসী ইস্যু প্রভৃতি বিষয় নিয়ে একের পর এক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। নারী কেলেঙ্কারি নিয়েও গত বছরের পুরোটা সময় মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম খবর প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া বা দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। বিশ্ব পরাশক্তির সঙ্গে কখনো সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে আবার পরমুহূর্তেই দেখা গেছে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন ট্রাম্প।

গত বছরের পুরোটা সময়জুড়েই চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ লেগে ছিল এ পরাশক্তির। শুল্ক এবং পাল্টা শুল্ক আরোপের ভেতর দিয়েই গেছে বছরের পুরোটা সময়। এতে যে কোনো পক্ষেরই মঙ্গল হয়নি তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন। বরং বিশ্বের এই বড় দুই পরাশক্তির বাণিজ্যযুদ্ধে পরোক্ষভাবে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছিল। বলা বাহুল্য, এসব অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি। কারণ এটি প্রমাণিত হলে তা বিরোধীদের সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে দিত। ইতোমধ্যেই এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর স্পিকার ন্যান্সি পোলেসি সাংরাশকে অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রাজনীতিতে অগ্রসর হতে থাকে। পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ট্রাম্প-কিম বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়। এই বাগ্যুদ্ধ এমন পর্যায়ে পৌঁছে, যখন বিশ্ববাসী ধারণা করছিল একটি পরমাণু যুদ্ধের। ঠিক সেই সঙ্কটপূর্ণ অবস্থা থেকেই ট্রাম্প-কিম দুজনেই সরে আসেন। তারা আলোচনার টেবিলে বসেন। প্রথম আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও সম্প্রতি ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আলোচনায় কোনো সুফল আসেনি। তবে আলোচনার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়নি।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন আর সেই সাপে নেউলে সম্পর্ক নেই। দু’পক্ষই আপাতত শান্ত। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যে সমালোচনা শুরু হয়েছিল, ক্রমেই সেসব আলোচনা স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প তার নিজস্ব কৌশলে সেসব পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জয়লাভ করছেন। এমনকি তার বিরোধী দল এবং নিজের দলের ভেতরেও যখন মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলা নিয়ে বিরোধী মনোভাব ছিল, তখনো তিনি তার অবস্থানে অটল থেকেছেন। তার নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেননি। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার জের ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘদিনের শাট ডাউন হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় পেতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে। তিনিও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেয়াল নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি ডলারের অনুমোদন দিয়েছেন। জরুরি অবস্থার আওতায় এটাই প্রথম তহবিল। বিরোধীপক্ষ বহুদিন তাকিয়ে ছিল রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনকালীন যোগাযোগ এবং প্রভাব বিস্তার করার বিষয়ে তদন্তের ফলাফলের ওপর। তারা হতাশ হয়েছেন। এটি আপাতত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রাজনৈতিক ময়দানে এগিয়েই রাখবে।

 

লেখক : সাংবাদিক

sopnil.roy@gmail.com

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads