রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ

প্রতীকী ছবি

পণ্যবাজার

রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ৬ মার্চ, ২০২০

আসন্ন রমজানে দেশের বাজারের নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাব, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্যের টালমাটাল অবস্থা, ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং পেঁয়াজের বাজার এখনো স্থিতিশীল না হওয়ায় রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে সরকারের ইমেজও অনেকাংশে জড়িত। তবে সরকার এসব পণ্যের আমদানির পাশাপাশি মজুদ বৃদ্ধিকল্পে কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।  

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে দেশে নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। রমজানে দেশে চিনি, ভোজ্য তেল, ডাল, খেজুর ও পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা বাড়তি থাকার সুযোগে একশ্রেণির ব্যবসায়ী-আমদানিকারক নানা অজুহাতে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে নিজেদের পকেট ভারী করে।  

এদিকে দেশের বাজারে রমজান মাসে চাহিদা ও সরবরাহের জোগান ঠিক রাখতে সরকার সম্প্রতি ২৫ হাজার টন চিনি এবং ৩০ হাজার টন সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে স্থানীয়ভাবে সরাসরি পদ্ধতিতে এসব চিনি ও সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, রমজান মাসে দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- ‘অ্যাট অ্যানি কস্ট’ আমাদের ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের মধ্যে সমন্বয়ের সবরকম প্রচেষ্টা বজায় রাখা। লক্ষ রাখা হচ্ছে, যাতে এক্ষেত্রে কোনোরকম মিসম্যাস না আসে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে কিছু ওয়েবার দিতে পারি। কখনো কখনো জরুরি প্রকিউরমেন্ট লাগে, আমরা জরুরি ভিত্তিতে সব নিয়ম-নীতি নাও মানতে পারি, না মেনেও হয়তো আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। আমাদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। তিনি বলেন, সামনে রমজান মাস, আমরা আশা করব আল্লাহর রহমতে যে বিপর্যয় এখন সারা বিশ্ব সহ্য করছে, সেগুলো সব শেষ হয়ে যাবে।

জানা গেছে, রমজানে মূলত চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, খেজুর ও পেঁয়াজের চাহিদা সারা বছরের চাহিদার প্রায় অর্ধেক। ফলে রমজানে এসব পণ্যের কোনোটির চাহিদার তুলনায় কম হলেই বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও দাম বাড়িয়ে তার সুযোগ নেয়।  রমজানে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার এবার এসব পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। গত  ফেব্রুয়ারি  পর্যন্ত  ইতোমধ্যে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এসব পণ্য আমদানির জন্য বেশি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রোজা শুরু হওয়া পর্যন্ত আরো এলসি খোলা হবে এবং এসব পণ্য দেশেও পৌঁছে যাবে। ফলে রোজা উপলক্ষে দেশে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ তৈরি হবে। সম্ভাব্য এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আগাম আমদানি করে ঋণপত্র খোলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিনি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৮ লাখ ১১ হাজার ৮৬২ টন। গত বছর একই সময়ে ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৬ টনের। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত চিনির মজুদও রয়েছে।

আর এ বছর ভোজ্যতেলের ঋণপত্র খোলার হারও বেশি। আগের বছরে পরিশোধিত ও ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৭ টন এলসি  খোলা হয়েছিল, এবার একই সময়ে খোলা হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি, ৬ লাখ ৫ হাজার ২৭০ টন। পামওয়েল এবার প্রায় এক লাখ টন বেশি

এলসি খোলা হয়েছে। গত অর্থবছরের ডিসেম্বর থেকে ২২  ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলসি খোলা হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার ৯০৫ টন। এ বছর একই সময়ে পামওয়েল তেলের এলসি খোলার পরিমাণ ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৪৩ টন। রমজানে তেলে ভাজা খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ তেল আমদানির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রমজানে খেজুরের চাহিদা বাড়তি থাকায় এবার খেজুর আমদানি বেড়েছে ২ হাজার টন। গত ২২  ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলসি খোলা হয়েছে ১৩ হাজার ৮০৪  মে. টনের, যা আগের বছরের একই সময়ে খোলা হয়েছিল ১১ হাজার ৬৭৪ টন। এছাড়া আগে আনা খেজুরেরও মজুদ রয়েছে।  এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছোলাও আমদানি হয়েছে গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ।  রমজানে দেশে ছোলার ব্যবহার  বেশি বাজারে যাতে ছোলার ঘাটতি না থাকে সেজন্য এ পণ্যটি আমদানির জন্য আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ঋণপত্র খোলা হয়েছে। ৭৭ হাজার ৮২৭ টন ইতোমধ্যে ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের ছিল ৪৮ হাজার ১৮৫ টন। এর আগে ও পরে আরো ছোলা আমদানি হবে। এ বছর মটরডালও বেশি আমদানি হয়েছে। মটরডাল আমদানি হয়েছে ১ এক লাখ ৯১ হাজার ৪১০ টন। আগের বছর যা ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ১১৭ টন। ফলে বাজারে এবার ডালের ঘাটতি থাকবে না বলে মনে করছে আমদানিকারকরা। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ডালও এবার আগের বছরের ডিসেম্বর ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে বেশি আমদানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার টন বেশি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এ সময়ে ডালের এলসি খোলা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৫৫৩ টন। আগের বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৩০৭ টন। তবে প্রায় ছয় মস ধরে চলতে থাকা পেঁয়াজের ঝাঁজ কমানোর উদ্যোগে ঋণপত্র খোলা পরিস্থিতিতে ফুটে ওঠেনি।  পেঁয়াজের বাজারে এখনো স্বাভাবিক না হওয়ার আগেই রোজা চলে আসছে। ফলে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমানোর মতো খবর আমদানিকারকরা দিতে পারছে না। তবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ রোজার মাসে বেশি পরিমাণে আসবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি সময়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৭৯ মে. টন। আর আগের বছরের একই সময়ে  যা ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার টন। ফলে  রমজানে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি রয়েই গেছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েন একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে রোজায় ব্যবহূত পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিলেও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিসহ কিছু কারণে জটিলতা রয়ে গেছে। তবে সরকারের নানামুখী উদ্যোগে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, সরকারের কাজ মানুষের কল্যাণে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্থিতিশীল রাখা। এজন্য শক্ত হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads