বিদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক লিজার প্রেমিক ফিদেল ক্যাস্ত্রো!

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

প্রেম মানে না ধর্ম-জাত, শত্রু-মিত্র, সীমানা- এটা অনেক পুরনো কথা। কিন্তু যুগে যুগে এটাই ঘটে এসেছে এবং এখনো ঘটছে। এর থেকে নিজেকে সরাতে পারেননি কিউবা বিপ্লবের নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তিনি প্রেমে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের এক সাংবাদিকের। শত্রু রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও লিজার প্রেমে ছিলেন তিনি মাতোয়ারা। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

সময়টা ছিল গত শতকের ষাটের দশকের শুরুর দিকে ফেব্রুয়ারির রাত। হাভানার হোটেল রিভিয়েরার এক স্যুইটে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক লিজা হাওয়ার্ড। কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পরও প্রত্যাশিত ব্যক্তির আগমন না ঘটায় এ নারী সাংবাদিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ হোটেলের ঘরের দরজায় টোকা। যার সাক্ষাৎকার নিতে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি হাভানা এসেছেন, সেই ভদ্রলোক তার সামনে দাঁড়িয়ে। তিনি হচ্ছেন কিউবা বিপ্লবের নেতা ৩৭ বছরের ফিদেল ক্যাস্ত্রো। কয়েক বছর আগেই বিপ্লব ঘটিয়ে তিনি তখন কিউবার শীর্ষ পদে।

ফিদেলকে দেখে লিজা বলে বসেছিলেন- আপনি দেশের শাসক হতে পারেন, কিন্তু আমিও গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক। আপনার সাহস হয় কী করে আমায় এতক্ষণ অপেক্ষা করানোর? এমনই ছিল দুইজনের আলাপ পর্বের শুরুটা। সে রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে কথা হয়েছিল ফিদেল আর লিজার। মার্কসবাদ থেকে শুরু করে কিউবায় রাজনৈতিক বন্দিদের অবস্থা, সবকিছু নিয়েই তারা কথা বলেন।

হোক না শত্রু রাষ্ট্রের নাগরিক, তাতে কী- যুক্তরাষ্ট্রের এ নারী সাংবাদিকের প্রেমে পড়তে বেশি সময় লাগেনি ফিদেলের। এরপর কয়েকবার কিউবা গিয়েছিলেন লিজা। বিপ্লবী নেতার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার বিষয়টি তিনিও স্বীকার করেছিলেন। একসঙ্গে অনেক সময় কাটানোর কথাও জানান তিনি। সম্প্রতি জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংগ্রহশালা লিজার হাতে লেখা কিছু ডায়রি ও নোট প্রকাশ করে। সেখানেই ফিদেলের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে আসে। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও দুজনের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হয়।

ক্যারিয়ারের শুরুতে টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করতেন লিজা। পরে সাংবাদিকতায় আসেন। কেনেডি ও জনসন সরকারের বার্তা ফিদেলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। আবার ফিদেলের বার্তাও হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন তিনি। তবে সবই হতো গোপনে। ফিদেল সম্পর্কে লিজা লিখেছেন, তার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মূহূর্ত। তিনি যখন আমায় গভীরভাবে জড়িয়ে ধরতেন তখন তাকে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ মনে হতো। নেতা আর মানুষ ফিদেল সম্পূর্ণ আলাদা ছিলেন।

আমার কাছে তিনিই ছিলেন জর্জ বার্নার্ড শ-এর ‘স্পার্ক অব ডিভাইন ফায়ার’। গোটা দুনিয়া তাকে একনায়কের তকমা দিলেও তিনি মোটেও তেমন ছিলেন না। হাভানার হোটেলেই লিজার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন ফিদেল। একবার লিজাকে তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি আমার জন্য খুবই বিপজ্জনক। তোমার মতো একটা মেয়েকে আমি গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছি। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, কিউবা সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন লেখার অভিযোগে চাকরি যায় লিজার। এরপর বেশিদিন বাঁচেননি তিনি। ১৯৬৫ সালে অতিরিক্ত মাদক সেবনে তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads