ঢাকার যানজট নিরসন ও মানুষের আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) সড়ক, নৌ ও রেলপথ নিয়ে একটি ত্রিমুখী পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই তিন পথের সমন্বয় নিশ্চিত করা হবে।
ড্যাপের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা পুরোটাই সড়ক পরিবহনের ওপর নিভরশীল। এর সঙ্গে রেল ও নৌপথ যোগ করে ত্রিমুখী সমন্বয়ের প্রয়োজন, যাতে অদূর ভবিষ্যতে সর্বস্তরের মানুষের আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া অযান্ত্রিক যানবাহন ও পথচারী চলাচলের ওপর গুরুত্ব দিয়েও ড্যাপ এলাকায় নেটওয়ার্ক ও এ-সংক্রান্ত নকশার নির্দেশিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশে এখন সড়কপথের পাশাপাশি রেল ও নৌপথের সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ দুটি পথের কোনো সমন্বয় নেই। প্রস্তাবিত সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম জলপথ এবং ভারী যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে রেলপথ নিয়ে পুরো যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সাজানো হচ্ছে। মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে পরিবহন নেটওয়ার্কের এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান ড্যাপ পরিচালক।
ড্যাপ এলাকায় ১ হাজার ৩২৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার নদী ও খাল রয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনোটির প্রশস্ততা ও নাব্যতা কম। কিছু কিছু খালে কালভার্ট ও বক্স কালভার্ট তৈরি করা হলেও এগুলো নৌযান চলাচলের উপযোগী নয়। এ অবস্থায় ড্যাপের প্রায় ৫৬৬ দশমিক ৬০২ কিলোমিটার নৌপথকে শ্রেণিক্রম অনুসারে তিন ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে−আন্তঃআঞ্চলিক, অভ্যন্তরীণ আঞ্চলিক ও সংগ্রাহক নৌপথ। তাই ২য় পর্যায়ে খালগুলোকে পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাকি খালগুলো নৌ চলাচলের অনুপযোগী ও সরু অর্থাৎ- অবশিষ্ট ৭৬০ দশমিক ৩০ কিলোমিটার চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী। নৌপথকে দ্বিতীয় পর্যায়ে উপযোগী করতে প্রথমে শ্রেণিক্রমে ভাগ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে কার্যকারিতা ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে তা নৌযান চলাচলের উপযোগী হবে।
ঢাকা যানজট কমাতে শহরের চারপাশে একটি বৃত্তাকার রেলরুট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮১ দশমিক ৯ কিলোমিটার বৃত্তাকার ট্রেন নেটওয়ার্ক, উন্নত রাস্তা এবং দুই লাইনবিশিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড গেজ থাকবে। বৃত্তাকার রুটে ২০টি স্টেশন থাকবে। স্টেশনগুলো হচ্ছে টঙ্গী, তেরমুখ, পূর্বাচল সড়ক, বেরাইদ, কায়েতপাড়া, ডেমরা, সিদ্ধিরগঞ্জ, চৌধুরীবাড়ী, চাষাঢ়া, ফতুল্লা, শ্যামপুর, সদরঘাট, বাবুবাজার, নবাবগঞ্জ, শংকর, গাবতলী, ঢাকা চিড়িয়াখানা, বিরুলিয়া, উত্তরা ও ধৌড়। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই পথের ট্রেন ক্রমাগত উভয় পাশে চলাচল করবে। এর মাধ্যমে সড়ক ও নৌপথের সমন্বয় করে ত্রিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
জানতে চাইলে ড্যাপের পরিচালক ও রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার সঙ্গে সড়ক ও রেলপথ ছাড়াও নৌপথের গভীর সম্পর্কে আছে। কিন্তু আমরা এখনো এই সম্পর্ককে বাস্তবরূপ দিতে পারিনি। তাই তিনটি মাধ্যমের সঙ্গে সমন্বয় করে ড্যাপে পরিবহন নেটওয়র্কের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা ড্যাপের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। বলছেন, ত্রিমুখী ব্যবস্থাটিকে নতুন করে চালু হতে যাওয়া বাস রুট রেশনালাইজেশনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্যাপের এ প্রস্তাব অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এটাকে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় জলের নেটওয়ার্ককে উপেক্ষা করেছি। খালে বক্স-কালভার্ট করে দিয়েছি। খাল ও নদীর যে ঐতিহ্য তা হারিয়ে ফেলেছি। অবশিষ্ট যেটুকু আছে তা দিয়েও অনেক কিছু করা সম্ভব।