সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানা সংলগ্ন চকবাজারে আনুমানিক ১৮৫০ কি ১৮৫২ সালে তৎকালীন জমিদারের মৌখিক অনুমতিক্রমে গণ্যমান্য মুসলমানরা নামাজ আদায়ের জন্য টিন দিয়ে একটি ছাপরা মসজিদ নির্মাণ করেন। সময়ের ব্যবধানে এই মসজিদটিই আজ ময়মনসিংহের গর্ব ও ঐতিহ্যের স্মারক ‘বড় মসজিদ’। বর্তমানে এই মসজিদটিতে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
প্রায় ০১.৯ একর জমির ওপর নির্মিত মসজিদটি তিনতলা সুরম্য স্থাপত্য নিদর্শন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১০৫ ফুট ও প্রস্থ ৮৫ ফুট। অপূর্ব অলঙ্করণে সুশোভিত মসজিদের ১২৫ ফুট উঁচু দুটি মিনার ও একটি কেন্দ্রীয় সুবৃহৎ গম্বুজে ব্যবহূত হয়েছে চীনামাটির তৈজসপত্রের টুকরা দিয়ে তৈরি নান্দনিক নকশার আস্তরণ। মসজিদের পশ্চিম দিকে রয়েছে দুটি অনুচ্চ ফাঁপা গম্বুজ। ছাদের রেলিং দেওয়া হয়েছে গম্বুজের আদলে ঢেউ খেলানো শোভায়। মসজিদ আঙ্গিনাকে অলঙ্কৃত করা হয়েছে একাধিক বৃহদাকৃতির অনুচ্চ গম্বুজ ও লতাপাতার বিন্যস্ততায় শোভিত ফটক ও অনুচ্চ নকশা দেয়াল দিয়ে। মসজিদের প্রবেশমুখে রয়েছে দুটি হাউজ ও আলাদা অজুখানা এবং এর অদূরেই রয়েছে কয়েকটি অত্যাধুনিক শৌচাগার। মসজিদের অভ্যন্তরে মূল্যবান মোজাইক পাথরের মেঝে, কার্পেট, দেয়ালজুড়ে শ্বেত-শুভ্র মনোরম টাইলস, সুদৃশ্য ঝাড়বাতি, শব্দ নিয়ন্ত্রণ ও তাপানুকূল ব্যবস্থাপনা মুসল্লিদের মনে জাগিয়ে তোলে জান্নাতি আবহ।
মসজিদ সংলগ্ন দুটি বহুতল ভবনে রয়েছে সুবিশাল আবাসিক হাফেজি ও কওমি মাদরাসা। এখানে বিদগ্ধ আলেমগণের তত্ত্বাবধানে ‘দাওরা হাদিস’ পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। রয়েছে সমৃদ্ধ ধর্মীয় পাঠাগার। মসজিদ মার্কেটেও রয়েছে কোরআন-কিতাব, টুপি, জায়নামাজ, তসবির বিশাল সমারোহ। পবিত্র রমজানে এই মসজিদে অসংখ্য মুসল্লি ইতিকাফ করেন। প্রায় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মিসর থেকে আগত প্রখ্যাত কারি ও আলেম হজরত মাওলানা আবদুল আওয়াল (রহ.) ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘মিসরি কারি সাহেব’ নামে পরিচিত। ১৯৪১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত টানা ৫৬ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর (রহ.) খলিফা হজরত মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.)। তার পবিত্র ফায়েজ, সান্নিধ্য, দোয়া, দাওয়াত ও খেদমত-মেহনতে ময়মনসিংহের ‘বড় মসজিদে’র দ্যুতি আজ বিশ্বব্যাপী। মসজিদ পরিচালনা কমিটি এ মহান আধ্যাত্মিক সাধকের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসাটির নামকরণ করে ‘জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.)’। ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত হজরাতুল আল্লামা শাইখ আবদুল হক (দা. বা.) অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন।