মেডিকেলে পড়াশোনা ও কিছু সতর্কতা

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

মেডিকেলে পড়াশোনা ও কিছু সতর্কতা

  • সুখী আক্তার
  • প্রকাশিত ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

মানুষের সেবা করার আশা বুকে নিয়ে যারা সাদা অ্যাপ্রোন গায়ে জড়িয়েছেন, এখনো ঠিকঠাক পড়তে পারছেন না- তারা হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই তা মানিয়ে নিতে পারবেন। আপনাদের এখনো অনেকটা পথ বাকি। এই পেশা আপন করার জন্য আপনারা যারা পড়াশোনা শুরু করেছেন, তাদের নিশ্চয়ই নিজের ওপর আছে অগাধ বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস ভেঙে যেতে পারে যেসব কারণে, তাতে একটু চোখ মিলিয়ে নিই চলুন-

শুরুর আগে : মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের এটা জানা কথা যে, এখানে ঠিকঠাক পড়াশোনা শেষ করতে হলে তাদের দুটি নীতিতে চলতে হয়। আর তা হচ্ছে, পেছনে পড়া যাবে না এবং প্রেমে পড়া যাবে না। তাহলে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা কি প্রেম করে না? এমন প্রশ্নের উত্তর মেডিকেলের শিক্ষার্থীরাই ভালো বলতে পারবেন!

প্রশ্ন করুন : মেডিকেলে নতুন ভর্তি হওয়া অনেকেই প্রশ্ন করতে চান না। আপনি ভালো ডাক্তার হতে হলে এবং ভালো জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই এটা করতেই হবে। অন্যের পথে না হাঁটাই ভালো এই ক্ষেত্রে। ক্লাসে টিচার যে বিষয়টি পড়াবেন, সেটি মন দিয়ে শুনুন। পারলে মূল বইটি সংগ্রহ করে তাতে চোখ বুলান। আর যে বিষয়টি আপনি বুঝতে পারবেন না, তা সরাসরি শিক্ষককে জিজ্ঞেস করুন। প্রশ্ন না করলে অজানা থেকে যাবে অনেক কিছুই।

ইন্টারনেটের খপ্পরে : প্রতিনিয়ত অনলাইন বা ইন্টারনেটে যারা পড়ে থাকেন, তাদের জন্য মেডিকেলের শুরুটা তেমন ভালো হয় না। এই সময়টায় কাজ ছাড়া কম্পিউটার এবং স্মার্টফোন ব্যবহার না করাই ভালো। এতে করে বার বার নোটিফিকেশন, ই-মেইল চেক করতে হয়। মনোযোগ চলে যায় অন্যদিকে। মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের জীবনের শুরুর দিকে এসব যত এড়িয়ে চলা যায় ততই ভালো। যে সময়টুকু অনলাইনে দেবেন, সেই সময়টুকু নোট করুন। ক্লাসে মোবাইল না টিপে স্যারদের লেকচারে মনোযোগ দিন। আর নোট নিন। প্রথম বর্ষটা কিন্তু আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেখার আসল সময় কিন্তু এটাই। তাই এই সময়টা হেলায় কাটাবেন না।

গবেষণা গ্রুপ : মেডিকেলে ভর্তি হয়েই বন্ধুরা মিলে গবেষণা গ্রুপ বানিয়ে নেন অনেকেই। যে গ্রুপগুলো টিভি সিরিয়াল, টক শো, নাটক-সিনেমা নিয়ে গল্প করে, এমন গ্রুপ থেকে বিরত থাকুন। আর এসব গ্রুপে যোগ দিলেন তো পড়াশোনায় হেরে গেলেন। তবে অবশ্যই পড়াশোনা সম্পর্কিত গ্রুপগুলোকে আপন করে নিতে পারেন। এই গ্রুপগুলোর সঙ্গে যুক্ত হলে পরীক্ষা থেকে শুরু করে যে কোনো টপিক আপনার কাছে আগে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

পুরনো পরীক্ষার প্রশ্ন : শিক্ষক সবসময় নতুন প্রশ্ন করতে পারেন যে কোনো বিষয় নিয়েই। তবু যে শিক্ষকের ক্লাস করেন, সেই শিক্ষক এবং সেই বিষয়ের পুরনো প্রশ্ন সংগ্রহ করুন। এতে আপনার ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, শিক্ষক আপনাকে কেমন প্রশ্ন করতে পারেন। আবার দেখা যায়, অনেক শিক্ষক পরীক্ষার জন্য নতুন প্রশ্ন করার সময় পাচ্ছেন না।

নিজের সেরাটা দিন : অনেক লড়াই করে আপনি এখানে এসেছেন। লড়াই করতে হবে আরো। তবে প্রত্যেক বিষয়েই আপনাকে যে সর্বোচ্চ নম্বর পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনি আপনার পরিশ্রম আর সেরাটা দিয়ে যান। অনুশীলন করুন আর চেষ্টা চালিয়ে যান। এসব করতে গিয়ে আবার শরীর খারাপ করা চলবে না।

নিজের জন্য একটি দিন : বই আর লেখাপড়ার মধ্যে বুঁদ না থেকে একটু নিজের কথা ভাবুন। সপ্তাহের একটি দিন রাখুন নিজের জন্য। এই দিন একান্ত নিজেকে সময় দিন। মন চাইলে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। গান শুনুন। মুভি দেখুন। যা ইচ্ছা তা-ই করুন। তবে নীতির বাইরে কিছু করতে যাবেন না। এই একটা দিন আপনাকে পুরো সপ্তাহ পড়ায় মনোযোগী করে তুলতে সাহায্য করবে।

ওষুধ সম্পর্কিত জার্নাল : যে কোনো ওষুধ আপনাকে কৌতূহলী করে তুলতে পারে। সেটি আপনার কাজে আসুক আর না আসুক। তবে জানা থাকা ভালো। ওষুধ সম্পর্কিত বই এবং বিভিন্ন জার্নালে মনোযোগ দিতে পারেন। এ সম্পর্কিত বিভিন্ন নিবন্ধও পড়তে পারেন। চাইলে নিজেও লিখতে পারেন। মনে রাখবেন, বইয়ের জ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞান দুটিই জানা দরকার। কিন্তু বই থেকে বিস্তারিত পড়ে যেটি জেনেছেন সেই রসদ কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে পাবেন না।

ডাক্তার নন আপনি : একটা কথা মাথায় রাখবেন, একজন কাপড়ের দোকানদারও চাইলে সাদা অ্যাপ্রোন গায়ে জড়াতে পারেন। তাই বলে তিনি ডাক্তার হতে পারেন না। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশা। প্রথম বছরই কাউকে ডাক্তারি পরামর্শ দেওয়া শুরু করবেন না। কেউ কোনো সমস্যায় পড়ে আপনার কাছে এলে তাকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। পরামর্শ দেওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ : মেডিকেল পড়ার জন্য আপনাকে যারা পাঠিয়েছেন, মানে আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখুন। প্রতিদিন একবার হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলুন। ছুটি কাটানো বা ফ্রি দিনটি অর্থাৎ যে দিনটি শুধুই আপনার, সেই দিনে ছবি তুলে পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠাতে পারেন। তারা নিশ্চয়ই আপনাকে নিয়ে চিন্তা করেন। তাই তাদের কথাও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads