ধর্ম

মুচকি হাসি মুমিনের ভূষণ

  • প্রকাশিত ১৫ মার্চ, ২০২১

তোফায়েল আহমেদ রামীম

 

 

 

 

ইসলামের দৃষ্টিতে মুচকি হাসির গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে হাসি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাসি মানব চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য। মানুষের অন্তরের অভ্যন্তরীণ উৎফুল্লতা প্রকাশ করার একটি মাধ্যম। হাসি সৌন্দর্যের প্রতীকও বটে। কখনো কখনো হাসি ভুলিয়ে দেয় আমাদের মনের সকল যাতনা। যারা হাসতে জানে তাদেরকে সবাই ভালোবাসে। হাসির দ্বারা পরস্পরের মধ্যে খুব সহজে আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের বীজ বপন হয়। একটুখানি হাসির পরশে শত্রুও বন্ধুত্বে রূপ নেয়। নিজের মুখের হাসি অপরের জন্যও আনন্দ বয়ে আনে। হাসি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের দুঃখের বোঝা হালকা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কারণ, হাসি মানুষের হূদয়ের চাপা ব্যথা দূরীভূত করে। জীবন চলার পথে,  কাজ-কর্মে বহু মানুষের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন মুখ মলিন না রেখে হাসিমুখে তাদের সাথে কথা বলাই শ্রেয়।

প্রকারভেদে হাসির বহুমাত্রিক উপকারিতা রয়েছে। যেমন-হাসি মানসিক চাপ দূর করে। ব্যথা জ্বালা কমায়। রোগ প্রতিরোধ করে। চিন্তা ভাবনা সতেজ ও শানিত করে। সম্পর্কের বিকাশও উন্নতি করে। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ইতিবাচক ভাবতে শেখায়।  নরওয়েতে এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি মানুষকে দীর্ঘায়ু করে। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম আদর্শের মধ্যে অন্যতম একটি মহৎ আদর্শ হলো তিনি হাজার দুঃখের মাঝেও মুচকি হাসতেন। অট্টাহাসি কখনো দিতেন না, অট্টাহাসি অভদ্রতা ও অহংকারের পরিচায়ক। আর মুচকি হাসি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।  মুচকি হাসি মুমিন বান্দার সৌন্দর্য প্রদর্শন করে।

হাসি সাধারণত তিন প্রকার। ১. তাবাসসুম। অর্থাৎ মৃদু বা মুচকি হাসি। এ হাসিতে দাঁতও দেখা যায় না, শব্দও হয় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা মুচকি হাসি হাসতেন। এ হাসিই উম্মতের জন্য সুন্নাত। ২. দিহক। এ হাসিতে দাঁত দেখা যায় কিন্তু শব্দ হয়না। এভাবে হাসা জায়েজ আছে তবে না হাসাই উত্তম। ৩. কহকহা। এটা হলো অট্টাহাসি। এটি নির্লজ্জ লোকদের হাসি এবং এতে চেহারার আকৃতি পরিবর্তন ঘটে। তাই ইসলামে অট্টাহাসি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, এতে অন্তর মরে যায়। এছাড়াও নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে অজু ও নামাজ উভয় নষ্ট হয়ে যায়।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন। তাঁকে কখনোই কেউ অকারণে মুখ মলিন করে থাকতে দেখননি। হাসি সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এমন কাউকেই দেখিনি যিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অধিক হাসিমুখে থাকতেন। (তিরমিযি) হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার হাসিও তোমার জন্য সদকা। (তিরমিযি) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রতিটি ভালো কাজ সদকা, আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা। (তিরমিযি-১৯৭০)

অতএব হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, হাসির দ্বারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। মুচকি হাসির মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে গড়ে উঠা হিংসার দেওয়ালের পতন হয় এবং আমরা একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারি। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা মুচকি হাসতেন, মুচকি হাসি ছিল তার চিরাচরিত ভূষণ। প্রতিটি হাদিসগ্রন্থে নবীজির হাসির ব্যাপারে আলোচনা এসেছে। বস্তুত হাসির মতো সাধারণ একটি আমলে আল্লাহ তায়ালা এত বড় পুরস্কার দিবেন, ভাবতেই অবাক লাগে। হাসিমুখে কথা বলার দ্বারা মুমিন বান্দা খুশি হয়, সাথে আল্লাহও খুশি হন। এর বিনিময়ে আল্লাহ বান্দাকে কিয়ামতের দিন আনন্দিত ও খুশি করবেন। তাই আসুন আমরা মুচকি হাসির অভ্যাস গড়ে তুলি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতকে সমাজে সমুন্নত রাখি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads