নিরাপদ সড়ক এবং কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আলাদা আন্দোলনের সময় আটকদের বেশিরভাগই ঈদুল আজহার আগে জামিন পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে যেমন আনন্দ রয়েছে, তেমনি মামলা চলমান থাকায় শঙ্কাও রয়েছে। অপরদিকে তদন্তাধীন ওইসব মামলা নিয়ে এখনই কথা বলতে রাজি নয় সরকার।
রাজধানীতে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকালে বেশ কয়েকজনকে আটক ও গ্রেফতার করা হয়। আটকদের মধ্যে ৫১ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের সবাই ঈদের আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, ভাঙচুর বা নাশকতার অভিযোগে ৫০টির বেশি মামলা আছে।
মুক্তি পাওয়া দুই শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে জানান, মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় এখনো তাদের মধ্যে ভয় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বস্থানীয়দের গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঈদের আগে তাদেরও জামিনে মুক্তি হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ফোরামের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন জানান, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো একজন কারাগারে আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ১২ জনকে ধরা হয়েছিল। ১১ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে আমাদের এক বোন লুমা এখনো মুক্তি পাননি। তার জামিনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ লুমাকে অবশ্য নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকালে ফেসবুকে গুজব সৃষ্টির ঘটনায় জড়িতের মামলায় আটক দেখানো হয়েছে।
সড়কে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদও ঈদের আগের দিন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এখনো মুক্তি পাননি। কারাগারে শহিদুলের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার পরিবার।
এ অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো শিক্ষার্থী ও এ ঘটনায় আটক অন্যদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মামলাগুলো কিন্তু তদন্তাধীন। এই পর্যায়ে মামলা প্রত্যাহার বা কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কেই সরকারের কারো কিছু বলা উচিত নয়। কারণ তাতে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেখেন, যেকোনো মামলা প্রত্যাহারের ক্ষমতা সরকারের আছে। কিন্তু আমি রিপিট করছি, এই মামলাগুলো যেহেতু তদন্তে আছে, সেজন্য এগুলো নিয়ে কোনো কথা বলা ঠিক হবে না।’