কুষ্টিয়া অটো মিলমালিকদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা আড়তদাররা। জেলায় প্রতিটি মিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান ও চাল মজুদ থাকার পরও চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ ও ভোক্তারা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হঠাৎ করেই কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে মিল গেটে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে মিল গেটে মিনিকেট চাল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। খুচরা বাজারে দাম আরো দুই থেকে তিন টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কাজললতা ও বিআর ২৮ জাতের চালের দাম ৩২ থেকে ৩৩ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের বাজারও ৩ টাকা বেড়েছে আগের তুলনায়।
সরেজমিন খাজানগর মোকামে গিয়ে মিলমালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ধানের দাম বাড়ার ফলে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। নতুন ধান বাজারে আসার পর চালের দাম কমে যাবে।
স্থানীয় চাল ব্যবসায়ী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, চাতাল লিজ নিয়ে চালের ব্যবসা করি। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য চালের বাজার বাড়ছে। মিনিকেট অর্থাৎ সরু ধানের দাম ৯০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৫০ টাকা, ২৮ জাতের প্রতি মণে বেড়ে সাড়ে ৮০০ টাকা, মোটা নতুন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকায়। এছাড়া কাজললতাসহ অন্যান্য ধানের দামও প্রতি মণে ১০০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে বিআর ২৮ ও কাজললতা চাল প্রতি কেজি অটো মিলমালিকদের কাছে বিক্রি করছি ৩৪ টাকায়। তাদের বাছাই খরচ হচ্ছে কেজিতে দেড় থেকে ২ টাকা। এরপর এই চাল তারা আরো ২ টাকা লাভে ৩৭ টাকায় বিক্রি করছে, যা খুচরা বাজারে গিয়ে বেড়ে ৪২ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
খাজানগরে বর্তমানে ৪৪টি অটো মিল ও হাসকিং মিল চালু রয়েছে ২ শতাধিক। তবে সব ব্যবসা অটো মিলমালিকদের নিয়ন্ত্রণে।
একাধিক চালকলমালিক জানান, বিগত কয়েক মাস ধরে চাল কেনা-বেচা কম ছিল। অটো মিলমালিকদের গোডাউনে প্রচুর চাল জমে যায়। তাই আমনে নতুন ধান ওঠার আগেই সিন্ডিকেট করে তারা কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রি শুরু করে। এ ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য আড়ত থেকে চালের অর্ডার দিলেও সংকট দেখিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে কম। যাতে বাজারে চালের টান থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় খাজানগর থেকে। এখানে রশিদ অ্যাগ্রো ফুড দাম বাড়ালে অন্যরা বাড়িয়ে দেয়। চালের বড় একটি অংশ এই মোকাম থেকে যায় সারা দেশে। তাই তো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এখানকার গুটিকয়েক মিলমালিক। বিশেষ করে রশিদের মিলের চালের বেশি চাহিদা থাকে। এ মোকামে মিনিকেট চাল উৎপাদন হওয়ায় সারা দেশের আড়তদাররা এখান থেকে বেশি চাল নিয়ে থাকে। তবে মিলমালিকদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জানতে চাইলে কয়েকজন মিলমালিক বলেন, নতুন ধান উঠতে সময় লাগবে। সেই সময় পর্যন্ত চালের বাজার বাড়তে পারে। প্রচুর ধান ও চাল মজুদ থাকারও বিষয়টিও জানান তারা।
এদিকে চালকলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, মিলমালিকরা এখনো লোকসানে চাল বিক্রি করছে। যে দামে ধান কিনতে হচ্ছে তাতে আরো বেশি দামে চাল বিক্রি করলে কিছুটা লাভ হতো। বর্তমানে চাল বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না।
তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। কৃষকদের ঘরে এই মুহূর্তে ধান মজুত নেই। ফড়িয়ারা বোরো মৌসুমের ধান মজুত করে অনেক স্থানে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে কৃষকের কোনো লাভ হচ্ছে না। নতুন ধানের বাজার কম। ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ধান।
এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার তদারকি করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে মোকামে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।