দেশের মিনি গ্রিড এলাকায় গ্রিড সম্প্রসারণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। তাই মিনি গ্রিডে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ জন্য একটি গাইড লাইন তৈরি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রের বরাতে দেশের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের বহু এলাকায় বিদ্যুতের তার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এসব এলাকায় মিনি গ্রিডের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হয়। কিন্তু বিদ্যুতের চাহিদা ও সে অনুযায়ী উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার গ্রিডলাইন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই গ্রিড সম্প্রসারণ করতে গিয়ে মিনি গ্রিড এলাকায়ও গ্রিড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মিনি গ্রিডে বিনিয়োগকারীরা পড়েছেন সমস্যায়। গ্রিডের বিদ্যুতের তুলনায় অনেক বেশি দামে সৌর বিদ্যুৎ কিনতে হয়। সেই বিদ্যুতের কার্যকারিতা না থাকলে তাদের বিনিয়োগের পুরোটাই নষ্ট হবে। এ সমস্যাকে বিবেচনায় নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সরকারি সংস্থাটির পক্ষ থেকে কিছু সমাধানের চিন্তা করা হচ্ছে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) বরাতে বাংলাট্রিবিউন নামের ওই অনলাইন সংবাদ মাধ্যম জানায়, এখন পর্যন্ত ১১টি সোলার মিনি গ্রিড স্থাপন করা হয়েছে যার সম্মিলিত ক্ষমতা ২ দশমিক ১৯ মেগাওয়াট। এ ছাড়া আরো ১৫টি সোলার মিনি গ্রিড প্রজেক্ট স্থাপনের কাজ চলছে যার সম্মিলিত ক্ষমতা ৩ দশমিক ১৭ মেগাওয়াট। এই প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ ইডকল কর্তৃক অর্থায়ন করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে ইডকলের আরো ৬১টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে বিউবো ৬৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি সোলার মিনি গ্রিড স্থাপন করেছে যেটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় সোলার মিনি গ্রিড। তাছাড়া দেশে এখন ৬০ লাখ বাড়িতে সোলার হোমসিস্টেম রয়েছে। আরো ৪৯ লাখ বাড়িতে সৌর বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সৌর নির্দেশিকা ২০১৩’ অনুযায়ী বলা হয়েছিল যে প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার ৫ বছর পরবর্তী সময়ে প্রকল্প এলাকায় সরকার গ্রিড বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করলে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহের সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, ব্যবস্থাপনা ব্যয় এবং বিনিয়োগ করা ইকুইটির ওপর ১৫ ভাগ রিটার্ন ধরে ট্যারিফ নির্ধারণের বিষয়টি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। বিষয়টি সেই সময় দরকার না হলেও এখন নতুন করে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, মিনি গ্রিড এলাকায় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হলে মিনি গ্রিডের বিনিয়োগকারীরা বিপদে পড়ছেন। তাই তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি একটি আলাদা গাইড লাইন করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার বিষয়ে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি মিনি গ্রিডের বকেয়া আদায়, হ্যান্ডওভার-টেকওভার, হিসাব নিকাশ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনা দেবে।
তিনি বলেন, এমনিতেই সৌর বিদ্যুৎ থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নেট মিটারিং সিস্টেম আমরা চালু করেছি। প্রতিটি বিতরণ কোম্পানিই তাদের গ্রাহকদের নেট মিটারিং এ উৎসাহিত করছে। অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এখন নেট মিটারিংয়ের পাশাপাশি মিনি গ্রিডগুলোও জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে।