ফারজানা বীথি
প্রসব-পরবর্তী স্থূলতা প্রায় প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের একটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য যেহেতু বেশি বেশি খেতে হয়, সে কারণে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া এ সময় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে পেটে মেদ জমে ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে প্রসব-পরবর্তী ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা গর্ভকালীন যে ওজন বাড়ে, সন্তান জন্মের পর তার অনেকটাই ঝরে যায়।
গর্ভাবস্থার পর মেদ কমানো একটু কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। যদি খাদ্যাভ্যাস ঠিক রেখে নিয়মিত ব্যায়াম করা যায়, তাহলে এ ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতা কমানো সম্ভব। তবে ওজন যদি গর্ভধারণের আগে থেকেই বেশি থাকে, তাহলে ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে একটু বেশি সময় লাগে।
অনেকেই ভাবেন, সন্তান প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে গর্ভাবস্থায় ধারণ করা ওজন অনেকটুকু কমে যায়। আদতে বিষয়টি তেমন নয়। এই বাড়তি ওজন কমতে প্রসবের পর বেশ সময় লাগতে পারে। প্রকৃতপক্ষে শিশু জন্মের পর ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের পেট খুব একটা কমে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মায়ের জরায়ু পুনরায় গর্ভাবস্থাপূর্ব অবস্থায় ফেরত না যায়।
ওজন বাড়তে পারে প্রসবের পরও
প্রসবের পর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের সুষম খাবার খাওয়া উচিত। কিন্তু শরীর যতটুকু ক্যালরি খরচ করতে পারে, তার চাইতেও যদি বেশি ক্যালরি গ্রহণ করা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে মেদ জমতে থাকবে। আবার প্রসূতি মা যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন, তাহলে শরীরে ক্যালরি খরচ কমে যায়। এর ফলে শরীর গর্ভাবস্থায় জমা অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে পারবে না। বিশেষ করে সিজারিয়ান হলে পেটের মেদ কমিয়ে আগের অবস্থায় যেতে অনেক সময় লাগে। সন্তান প্রসবের পর অনেকেই মানসিক চাপে থাকেন। এই মানসিক চাপের মোকাবেলা করতে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। ব্যায়াম করে সুগারের মাত্রা কমাতে না পারলে তা চর্বি হিসেবে জমা হয়।
ওজন কমানোর জন্য করতে হবে যে কাজগুলো
১. সাধারণত সন্তান জন্মের ৬ সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভাবস্থার অর্ধেক ওজন কমে যায়। বাকি ওজন কমতে একটু সময় লাগবে। তাই প্রসবের পর ওজন কমানোর চিন্তা অন্ততপক্ষে ৬ সপ্তাহ পর থেকে শুরু করা উচিত। শিশুর দুই মাস বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ বুকের দুধের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে সপ্তাহে ৬৫০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
২. ওজন কমানোর লক্ষ্যে মায়েদের জন্য ক্রাশ ডায়েট একেবারেই মানা। প্রসব-পরবর্তী সময়ে তাই ভুলেও ক্রাশ ডায়েট করা যাবে না। কেননা এটি আপনার সন্তানের ওপরও প্রভাব ফেলবে। ক্রাশ ডায়েটে অল্প সময়ে আপনার ওজন অনেকটা কমে গেলেও একটু অসচেতন হলেই এগুলো দ্রুত ফিরে আসে। এ ছাড়া ক্রাশ ডায়েটে শরীরের চর্বি যতটা না ক্ষয় হয়, তার চাইতে মাংসপেশি ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. গর্ভাবস্থার পর খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যসম্মত টিপস আপনার স্বাস্থ্য ঠিক রেখে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
৪. একবারে বেশি না খেয়ে সারাদিনে পাঁচ-ছয়বার কম কম করে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রয়োজনে মাঝে হালকা নাশতা করতে পারেন। এতে করে একবারে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমবে। এ ছাড়া খাবার খাওয়ার সময় একটু বেশি সময় নিয়ে খাওয়া ভালো। সকালের নাশতা কখনোই বাদ দেবেন না। সকালের খাবার সারাদিনে শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
৫. নাশতায় বেশি ফল ও সবজি, যেমন আপেল, কমলালেবু, কলা, গাজর- এসব বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা এগুলোতে ফ্যাট কম কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও ভিটামিন থাকে।
৬. দিনে ৮-৯ কাপ তরল খাদ্য, যেমন ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি খেতে হবে। যেসব খাবারে চিনি আর ক্যালরি বেশি থাকে, সেসব খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এ সময় সিদ্ধ ও হালকা তেলে রান্না করা খাবার খাওয়াই ভালো।
৭. প্রসব-পরবর্তী ওজন কমাতে নিয়মিত হালকা ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের সঙ্গে ঠিকমতো ব্যায়াম করাই গর্ভাবস্থার পর দ্রুত ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করবে। তবে ব্যায়ামের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকারী মা আর সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবকারী মায়ের ব্যায়াম শুরুর সময় ভিন্ন। একবারে কঠোর পরিশ্রম শুরু না করে প্রতিদিন একটু একটু করে ব্যায়াম করুন। প্রসবের পর স্বাভাবিকভাবেই পেটের চামড়া শিথিল হয়ে যায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় পেটেই অপেক্ষাকৃত বেশি চর্বি জমে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পেটের পেশি মজবুত করার মতো ব্যায়ামগুলো শুরু করতে পারেন।