মাদরাসায় চলছে বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

মাদরাসায় চলছে বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি

  • ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
  • প্রকাশিত ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

চলছে বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় মাস ডিসেম্বর। এ মাসেই বাঙালি জাতি পেয়েছিল তার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা, পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ে ৯ মাসের ত্যাগের পর এ মাসেই রচিত হয়েছিল এক অমর গাথা- বাঙালি জাতির স্বাধীনতা, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্র বিজয় গৌরবে তার যাত্রা শুরু করেছিল, আজ তা বিশ্বের কাছে এক অপার বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল!

বাঙালি জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মাধ্যমে রচিত হয় বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক মুক্তি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম আর ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মাধ্যমে আসে জাতীয় মুক্তি।

প্রতিবছরের মতো এবারো বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুরো মাসজুড়ে বিজয়ের সেই আনন্দ উদযাপন করবে বাংলাদেশ। আর এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো। সরেজমিনে বিভিন্ন মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায় বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি। রাজধানীর ঐতিহাসিক ...... রামপুরা মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু ছাত্র হামদ-নাত ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন তারা হামদ-নাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে? তাইসির জামাতের ফাহিম নামের একজন ছাত্র বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। এই দিনে আমাদের এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের এই মাদরাসায় প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বরে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। সেই সাথে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তাদের জন্য দোয়া করা হয়।

এই মাদরাসার মেশকাত জামাতের মাবরুর নামের একজন ছাত্র বলেন, আগে আমাদের মাদরাসাগুলোতে বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরে কোনো অনুষ্ঠান হতো না। এখন অনেক ধরনের অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানগুলোতে মাদরাসার ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। এছাড়া অনুষ্ঠানে হুজুররা ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করেন। এটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।

রাজধানীর আরো একটি মাদরাসা তেজগাঁও মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার ছাত্ররা দেয়ালিকা প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই মাদরাসার ছাত্ররা প্রত্যেক বছর বিজয়ের মাস আসলেই বাংলা ও আরবি দেয়ালিকা প্রকাশ করে। সেখানে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন লেখা থাকে। সরহে বেকায়ার ছাত্র মুশফিকুর রহিম বলেন, প্রত্যেক বছর বিজয় দিবস উপলক্ষে আমাদের মাদরাসায় দেয়ালিকা বের করার বিশেষ একটি আয়োজন থাকে। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর আমাদের ছাত্রদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকে।

রাজধানীর আরো একটি স্বনামধন্য মাদরাসা শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিচার্স সেন্টারের কিছু ছাত্রকে দেখা যায় রাতের আঁধারে মাদরাসার চারপাশে ছোট ছোট পতাকা লাগাচ্ছে। একজন ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমরা এই রাতে কেন পতাকা লাগাচ্ছ? উত্তরে সে বলে, দিনে আমরা সময় পাই না। সারা দিনই আমাদের পড়া থাকে। যার কারণে আমরা দিনে পতাকাগুলো লাগাতে পারিনি। এখন আমাদের ঘুমের সময়। আমরা ঘুম বাদ দিয়ে পতাকা লাগাচ্ছি। এতেই আমরা বেশি আনন্দ পাই। ১৬ ডিসেম্বরের দিন সব স্কুল কলেজ ও মাদরাসাতেই অনুষ্ঠান হয়। আমাদের এখানেও অনুষ্ঠান হয়। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মাদরাসার যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা হয়।

ঢাকার আরো একটি ঐতিহাসিক মাদরাসা হলো জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া মাদরাসা। সেখানকার জাললাইন জামাতের শিক্ষার্থী আল আমিনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাদের মাদরাসায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর শহীদদের স্মরণ করে মহান রবের দরবারে ছাত্র-শিক্ষক যৌথভাবে মোনাজাত করেন এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। আরো কিছু আয়োজন থাকে, কোরআন হাদিসের আলোকে মাতৃভূমির গুরুত্ব ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আলোচনা করা হয়। তাছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা ও কুইজের আয়োজন করা হয়।

বারিধারা মাদরাসার শিক্ষক মোস্তফা ওয়াদুদ বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের দিন লাল-সবুজের পতাকা উড়বে দেশের আনাচে-কানাচে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িতেও দেখা যাবে পতপত করে উড়ছে বিজয় নিশান- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ১৬ ডিসেম্বর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। তার আগে ১৪ ডিসেম্বর বেদনাভরে স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন যে ভাষণে, সেটি গত অক্টোবরে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়। স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূখণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্যখচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এই দিনে। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন হওয়ায় বেদনাবিধুর এক শোকগাথার মাসও এই ডিসেম্বর। এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পাক হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। একটি জাতিকে মেধাহীন করে দেওয়ার এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের কোনো নজির বিশ্বে নেই। জাতি এ বছর বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী পালন করবে। ইতোমধ্যেই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। চলছে আরো অনেক ‍যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ। আশা করছি আগামীতে তাদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads