মাঘের বৃষ্টিতে তলিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

মাঘের বৃষ্টিতে তলিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

মাঘ মাসের হঠাৎ বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে আলুসহ নানা ফসল। ভারি বৃষ্টি ও মাঝারি বাতাসে কাঁচা ও পাকা সরিষা গাছগুলো হেলে পড়েঠে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে ডুবিয়ে গেছে আলুর ক্ষেত। এদিকে তলিয়ে যাওয়ার পরেও আশা ছাড়েননি কৃষকরা। তাদের ফসল বাঁচিয়ে রাখতে ক্ষেত থেকে পানি অপসারণ করতে আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

মুন্সীগঞ্জ : গত শুক্রবার দুপুর হতে মুন্সীগঞ্জে শুরু হয় বৃষ্টি। রাতভর টানা বৃষ্টিতে আবারো তলিয়ে গেছে অনেক আলু জমি। এতে ফের বীজ পচে আলু গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার শংকায় কৃষক জমির পানি সেচছে। সরেজমিনে গতকাল শনিবার ভোর থেকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও, কাইচমালধা, খলাগাঁও, চাঠাতিপাড়া, মান্দ্রা, গনাইসার, মটুকপুর, ধীপুর, ভিটি মালধা, ডুলিহাটা, রংমেহার বিল ঘুরে দেখা গেছে কোদাল এবং বালতি হাতে কৃষক ছুটছে জমির দিকে। এক জমি হতে অন্য জমিতে ঘুরে ঘুরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছেন তারা। এ বছর আলু রোপণ শুরুর মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় জাওয়দের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে কৃষকের বীজ আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ধারদেনা করে কৃষক আবারো আলু চাষ করেছিলেন। একদিকে বিলম্বে চাষ করায় আলু উৎপাদন নিয়ে যখন শঙ্কায় কৃষক, তখন ফের আবারো বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আলু জমি। এসব জমিগুলো ২০/২৫দিন আগে আলু রোপণ করেছিলেন কৃষক। গাছগুলো গজিয়ে পুরো জমি ছেয়ে গেছে। এরমধ্যে বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমায় গাছসহ আলু বীজ পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এদিকে চলতি মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাতের কারণে আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মুন্সীগঞ্জে পূরণ হয়নি আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ২১০৪ হেক্টর কম জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে বিলম্বে। এতে জমিতেও ফলন কম হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভবনা ছিলনা আগেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, হেক্টর প্রতি ৩০ মেট্রিক টনের কিছুটা বেশি আলু উৎপাদন হওয়ার কথা। আর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অনাবাদি রয়েছে ২১০৪ হেক্টর জমি। সে হিসেবে অনাবাদি জমিগুলোতে ৬৩০০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও জমি অনাবাদি থাকায় সেটি আর হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, বৃষ্টিতে কী পরিমাণ আলু জমি তলিয়েছে, তার সঠিক তথ্য এখনো আমাদের হাতে নেই। তবে বৃষ্টিতে নিচু জমির কিছু আলু তলিয়ে গেলেও উঁচু জমিতে বৃষ্টি হওয়ায় ভালো হয়েছে। কৃষকের সেচের কাজটি হয়ে গেছে। নিচু জমিগুলো যেগুলোতে পানি জমেছে কৃষকের উচিত হবে সেই সমস্ত জমি হতে দ্রুত পানি বের করে দেওয়া তাহলে নিচু জমিগুলোর আলু নষ্ট হবে না।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, আহম্মেদাবাদ, জিন্দারপুর ও পুনুট ইউপিতে চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা ছাড়িয়ে ১১ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এরমধ্যে অ্যাস্টারিক্স, মিউজিকা, কারেজ, সাদিকা, গ্র্যনুলা, ডায়মন্ড, লরা, রোমনা ও সেভেন্টি জাতেরসহ আলু রোপণ হয়েছে। এই উপজেলার আলুচাষিরা তাদের জমি থেকে আগাম জাতের ৫শ হেক্টর জমি থেকে আলু উত্তোলন করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে আলুসহ নানা ফসল ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে। আলুর তোলার শেষ সময় প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের কারণে অনেকটা দিশেহারা হয়ে গেছে কৃষকরা। টানা বৃষ্টি কারণে আলুসহ ধানের বিজতলা পানির নিচে ডুবিয়ে গেছে। আর মাঝারি হাওয়ার কারণে সরিষা গাছগুলো হেলে পড়ে। ডুবে যাওয়া আলুগাছগুলো নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা মাঠে নেমে তাদের আলুর চারাগুলো রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে কৃষকেরা সঠিক সময়ে তাদের কষ্টের ও স্বপ্নের আলুগুলো ঘরে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ভুগছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান বলেন, এ বছর ১১ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা আলু রোপণ করেন। এরমধ্যে ৫শ হেক্টর জমিতে থেকে আলু তোলা হয়েছে। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে কিছু আলুর জমি পানিতে তলিয়ে যায়, আর মাঝারি বাতাসের কারণে কিছু কাঁচা ও পাকা সরিষা গাছগুলো হেলে পড়ে। তবে জমি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিলেই ওসব জমির আলু, সরিষা ও ধানের চারাগুলো আগের মতোই ভালো হবে। কৃষকদের আলুর ও সরিষার তেমন ক্ষতি হবে না। তাছাড়া উপজেলার সকল কৃষদের সু-পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। তাই আশা করছি, এবারে আলুসহ অন্যন্যা ফসল বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও : অসময়ের ঝড় বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচাইতে বিপাকে পড়েছে জেলার আলুচাষিরা। এই বৃষ্টি তাদের জন্যে এনেছে মরার উপরে খাঁড়ার ঘা। গত শুক্রবার ভোর থেকে জেলায় শুরু হয়েছে ঝড় বৃষ্টি। এতে আলুক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় আলু উঠানো যাচ্ছে না। এমনিতেই যেখানে এ বছর আলু বিক্রি করতে হচ্ছে তিন থেকে চার টাকা কেজি। সেখানে আলু উত্তোলন করতে না পারলে চাষিরা আরও বিপাকে পড়তে পারে বলে মনে করেন ঠাকুরগাঁও কৃষি কর্মকর্তা।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, বৃষ্টিতে আগাম গমের ও আলুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এবং কৃষিকাজ ব্যাহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত আলুক্ষেতের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হেক্টর।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবু হোসেন বলেন, অসময়ের এই বৃষ্টির কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়েছে। কৃষকরা এখন আলু ক্ষেতে পানি না শুকানো পর্যন্ত আলু উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকবে। এখন সবচেয়ে জরুরি জমাট পানি ক্ষেত থেকে বের করার ব্যবস্থা করা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads