মহিষের দুধ ও ঐতিহ্যবাহী দধি

মহিষের দুধের ঐতিহ্যবাহী দধি

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ঐতিহ্য ধারণ করে মহিষ পালন করছেন জেলার অনেকেই

মহিষের দুধ ও ঐতিহ্যবাহী দধি

  • প্রকাশিত ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

মাসুদ রানা, দৌলতখান (ভোলা)

মহিষ : ভোলার অর্থকরী সম্পদের অন্যতম একটি মহিষ। এ খাত থেকে মহিষ মালিকরা বছরে আয় করেন কোটি কোটি টাকা। লোকালয়ে ঘাসের অভাব থাকায় ভোলার বিভিন্ন চরে মহিষ পালন করা হয়। রোদ বৃষ্টি ঝড় আর শীত উপেক্ষা করে বিভিন্ন দল বা বাথানে বিভক্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে সার্বক্ষণিক অবস্থান করে খাবার খায় মহিষ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব চরে লোনা পানির প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় ঘাস আর মিষ্টি পানির অভাবে এবং বজ্রপাতে এখন মারা যাচ্ছে এ অঞ্চলের মহিষ। চরফ্যাশনের ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদার জানান, ঘাস আর মিঠাপানির অভাবে এবং বজ্রপাতে ঢালচরে গত এক বছরে শতাধিক মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশু মারা গেছে। চরফ্যাশনের কুকরিমুকরি ইউপি চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন জানান, গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে এখানে শুধু বজ্রপাতেই শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী ভোলায় ৯৫ হাজার মহিষ আছে। বিশাল এই মহিষ সম্পদ, মিঠাপানি ও খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি চিকিৎসাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু সমস্যা সমাধানে প্রাণিসম্পদ বিভাগের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর জানান, ভোলার উপকূলীয় চরসমূহে মাটির কিল্লা তৈরির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হলে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হবে। ডা. আলমগীরের মতে, চর চটকিমরায় শতাধিক মহিষ রয়েছে। অন্যদিকে ভোলার তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরার চরে হাজার হাজার মহিষ রয়েছে। ইফাদ ও পিকেএসএফের প্রকল্প ওইসব চরে সম্প্রসারিত হলে প্রতিষ্ঠান দুটির উদ্দেশ্য সফল হবে।

মহিষের দুধের কাঁচা দইয়ের চাহিদা দেশব্যাপী : দ্বীপজেলা ভোলার ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত মহিষের দুধের কাঁচা দই। প্রায় দুইশ বছরের ঐতিহ্য বহন করা এই দই অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদন। এই টক দই গুড়, মিষ্টি অথবা চিনি দিয়ে খাওয়া হয়। এছাড়া মুড়ি, চিড়া ও খৈ দিয়েও খাওয়া যায়। দই সব সামাজিক, পারিবারিক ও ঘরোয়া ভোজে থাকতেই হবে। খাবার তালিকায় জনপ্রিয় এই খাদ্যটি না থাকলে সামাজিকতা পরিপূর্ণতা পায় না। এছাড়া খাবার হজমে কাঁচা দুধের দই বাড়তি সহায়তা করায় এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। অনেকেই কুটুম বাড়িসহ দূর-দূরান্তের পছন্দের মানুষের জন্য দই নিয়ে যান।

স্থানীয় দৈনিক আজকের ভোলা’র সম্পাদক মু. শওকাত হোসেন বলেন, প্রায় চারশ বছর আগে ভোলার উৎপত্তি হলে এখানে ক্রমেই জনবসতি গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হলে তারা মহিষ, গরু, ছাগল পালন শুরু করে। জানা যায়, জেলায় শতাধিক বিচ্ছিন্ন চর রয়েছে। এসব চরে লালন করা হয় হাজার হাজার মহিষ। অনেকে আবার নিজস্ব মহিষের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন করে দই তৈরি করেন। দইয়ের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন চরে গড়ে উঠেছে শত শত মহিষ বাথান। এসব বাথান থেকে মণে মণে দুধ আসে শহরের বাজারগুলোতে।

গাজীপুর রোডের চেয়ারম্যান লেনের আদর্শ দধি ভান্ডারের আবদুল হাই পারিবারিকভাবে দইয়ের ব্যবসা করছেন। তিনি জানান, সাধারণত দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের দইয়ের (টালির) চাহিদা বেশি। বর্তমানে দেড় কেজি ওজনের দই দেড়শ ও দুই কেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দই থেকে মাখন, ঘি ও ঘোল বানানো হয়। মাখনের কেজি ৮০০ ও ঘিয়ের কেজি ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়। মহিষ বাথানের মালিক ও সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ মো. ইউনুছ জানান, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চরে তাদের বাথানে প্রায় আড়াইশ মহিষ রয়েছে। জেলায় অনেকেই মহিষ পালন করছেন, যা তাদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads