মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত আশ্রমে উন্নয়নের ছোঁয়া

গান্ধী আশ্রম

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত আশ্রমে উন্নয়নের ছোঁয়া

  • তপন কুমার সরকার, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর, ২০১৮

ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের পথিকৃত, অহিংস ব্যক্তিত্ব ও ভারতবর্ষের জনপ্রিয় নেতা মহাত্মাগান্ধির স্মৃতি বিজড়িত গান্ধী আশ্রম। নওগাঁ জেলাধীন  আত্রাই উপজেলার আত্রাই রেলস্টেশন সংলগ্ন এই আশ্রমটি হতে পারে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই আশ্রমটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব বলে দাবি এলাকার সচেতন মহলের।

পূর্বে আশ্রমটিতে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া না লাগলেও বর্তমান সরকার ও ভারতীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় আশ্রমটিতে মহাত্মা গান্ধী ও পি.সি. রায় মেমোরিয়াল হল গড়ে উঠেছে। একতলা ভবনটি দ্বিতলায় উন্নীত করা হয়েছে। গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত গুদাম ঘরটিও সংস্কার করা হচ্ছে। এছাড়া নওগাঁ জেলা পরিষদের অর্থায়নে সেখানে বাউন্ডারি ওয়াল ও দৃষ্টিনন্দন গেট নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এখানে গান্ধীজির মূরাল অবমুক্ত করা হয়েছে।

ইংরেজ সম্রাজ্যবাদের নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্ট যখন ভারতবর্ষ সে সময় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনমনে জায়গা করে নেন ভারতবর্ষের  কিংবদন্তি মহাত্মা গান্ধী। হিন্দু মুসলমানের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধর্ম বর্ণের উর্ধ্বে থেকে তিনি এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইংরেজদের পণ্য বর্জন করে দেশিয় পণ্য ব্যবহারে জনমত সৃষ্টি করেন। জনশ্রুতি আছে, তিনি এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ১৯২৫ সালে আত্রাই এসেছিলেন। সে সময় তিনি আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন আজকের এই গান্ধী আশ্রমে অবস্থান করে এলাকার অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করেন। একই সঙ্গে এলকাবাসীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে তিনি এখানে খদ্দর কাপড় তৈরির তাঁত শিল্প স্থাপন এবং খাঁটি সরিষার তেলের জন্য ঘানি স্থাপন করেন।

এ বিষয়ে আত্রাই গান্ধী আশ্রমের সাধারন সম্পাদক  ডা. নিরঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘এক সময় গান্ধি আশ্রমের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা সাংসদ মো. ইসরাফিল আলম ও সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমানকে উপদেষ্টা করে এর উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলে। তাদের প্রচেষ্টায় ভারতীয় অর্থায়নে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মহাত্মা গান্ধী ও পিসি রায় মেমোরিয়াল হল। এছাড়াও এখানে প্রতি বছর পালিত হয় গান্ধির জন্মোৎস ‘।

গান্ধি আশ্রমের সভাপতি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মোঃ ইসরাফিল আলম এমপির আন্তরিকতা ও সাবেক এমপি মোঃ ওহিদুর রহমানের প্রচেষ্টায় বর্তমানে গান্ধি আশ্রম অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছে। এখানে ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনারসহ কুটনৈতিক ব্যক্তি বর্গ এসেছেন। এখানে একটি পুর্ণাঙ্গ দাতব্য চিকিৎসালয়, কৃষি খামার, মৎস্য খামারসহ বেশ কিছু স্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যেহেতু এ গান্ধী আশ্রম উপজেলা সদর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এবং মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। এখানে উল্লেখিত স্থাপনাগুলো নির্মিত হলে এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছানাউল ইসলাম বলেন, ‘ভারতবর্ষের জনপ্রিয় নেতা মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিধন্য গান্ধী আশ্রম এখন আর অবহেলিত পল্লী নেই। উন্নয়নের ছোঁয়ায় একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে চলেছে। এখানে আধুনিক মডেলের ডাক বাংলো নির্মাণ, বিভিন্ন চিত্রকর্ম  নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা গান্ধি আশ্রমের পাশে গান্ধির ভাস্কর্য নির্মাণ ও বসার জায়গা তৈরি করেছি। সেই সঙ্গে পানির ফোয়ারা স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে’।

স্থানীয় সাংসদ মো. ইসরাফিল আলম বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে এই বিখ্যাত আশ্রমটি ছিলো ধুলোর মাঝে ডুবে। কিন্তু বর্তমান উন্নয়নের সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভারত সরকারের সহায়তায় এই গান্ধী আশ্রমটিতে লাগিয়েছি আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে এখনো এখানকার অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। আগামীতে এই উন্নয়নের সরকার ক্ষমতায় এলে এবং জনগন আমাকে সুযোগ দিলে আশ্রমটিকে আধুনিক মানসম্মত ও আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রে উন্নিত করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাবো’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads