আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৪৮টি আসনে জয়ী হতে পারে বলে এক মতামত জরিপে পূর্বাভাসে দেখা গেছে।
রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বর মাসে ৯ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত দেশের ৫১টি সংসদীয় আসনে সোয়া দুই হাজার ভোটারের মধ্যে এই ছায়া ভোট বা মতামত জরিপ চালায়।
আরডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৪৯টি আসনে জয় পেতে পারে। বাকি তিনটি আসনে জয় পেতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় আরডিসির জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত এই ছায়া ভোটের ফলাফল। ছায়া ভোটে জাতীয় পার্টির পক্ষে ভোট পড়েছে ৪ শতাংশ। আর ৩ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৯৮ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট দিতে চান।
ভোটের ফলাফল দেখে আরডিসির অনুমান, এবারের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট ২৪৮টি আসন পাবে, ঐক্যফ্রন্ট পাবে ৪৯টি আসন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বা অন্যান্যরা পাবে তিনটি আসন।
ফলাফল তুলে ধরে আরডিসির অর্থনীতিবিদ ফরেস্ট ই কুকসন জরিপ সম্পকে বলেন, গ্রামীণ নারী থেকে সেনাবাহিনীর সদস্য-সব শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। নমুনার সংখ্যা একটু ছোট। তবে দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের ভোটারদের থেকে মতামত নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরামর্শক কুকসন বলেন, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হয়ে নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল জানতে এই জরিপ করা হয়। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচনের আগে এই ধরনের ভোট নেওয়ার রেওয়াজ আছে।
তিনি জানান, ছায়া জরিপে ভোট দিতে নারীদের জন্য ছিল লাল ব্যালট পেপার এবং পুরুষদের জন্য ছিল নীল ব্যালট পেপার। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্যগুলোকে নমুনা হিসেবে নিয়ে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের জেলা-উপজেলাগুলো থেকে ভোটারদের এই জরিপ করা হয়।
ভোট দেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে মতামত দিয়েছে ভোটাররা। ফলাফলে আওয়ামী লীগকে ভালো বলেছে, ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং খারাপ বলেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। বিএনপিকে ভালো বলেছে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং খারাপ বলেছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। জাতীয় পার্টিকে ভালো বলেছে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং খারাপ বলেছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
জাতীয় নির্বাচনের ভোটারদের সংখ্যার তুলনায় এই জরিপের নমুনার সংখ্যা কম বলে মনে করেন কি না?-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ফরেস্ট ই কুকসন বলেন, জরিপটির নমুনা ছোট। তবে যুক্তরাষ্ট্রেও এমন ধরনের জরিপ নেওয়া হয়। যেখানে নমুনার সংখ্যা থাকে কেবল এক হাজার। তার মতে, ছোট নমুনা হলে সহজে সেটা ব্যবস্থা করে একটা উত্তর পাওয়া যায়।
ভোটারদের মতামত সম্পর্কে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমার মনে হয়, নির্বাচনে সহিংসতা বা দ্বন্দ্ব যা-ই হোক না কেন, সেটা হয়তো ভোটারদের ওপর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু ভোটারদের পছন্দে বিশেষ পরিবর্তন আসবে না।
এর আগে গত অগাস্ট মাসে করা আরডিসির আরেকটি জরিপের বরাতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এক ফেসবুক পোস্টে বলেছিলেন, নির্বাচনে তাদের দল আওয়ামী লীগ ১৮০ থেকে ২২০ আসনে জয় পেতে পারে বলে তারা আভাস পেয়েছেন।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অংশগ্রহণ না করা ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা। সে নির্বাচনে সব মিলিয়ে ২৩২টি আসনে জয় পেয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পায় ৩৩টি, ওয়াকার্স পার্টি ছয়টি, জাসদ পাঁচটি, জেপি একটি, তরিকত ফেডারেশন একটি, বিএনএফ একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৩টি আসনে জয় পান।
এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেয়েছিল। দুই বছর জরুরি অবস্থার পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০, বিএনপি ২৯, জাতীয় পার্টি ২৭, জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি, এলডিপি একটি, বিজেপি একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চারটি আসনে জয়ী হন।