ভয় পেয়ো না...

শৈশবে শিশুর ভয় পাওয়ার বিষয়টি অমূলক নয়

ছবি : ইন্টারনেট

ফিচার

ভয় পেয়ো না...

  • বেদৌরা বিনতে আফাক
  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই, ২০১৮

লামিয়া মাঝে মাঝেই ঘুমের মধ্যে হঠৎ জোরে চিৎকার করে ওঠে। কখনো বা ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে। বাড়িতে যাদের ছোট শিশু রয়েছে তারা শিশুর এমন হঠাৎ ভয় পাওয়ার বিষয়টির সঙ্গে বেশ পরিচিত। শৈশবে শিশুর ভয় পাওয়ার বিষয়টি অমূলক নয়। এ সময় সাধারণত হঠাৎ কোনো উচ্চ শব্দ, কোনো প্রাণীর ডাক শোনা, অন্ধকারে বা নতুন কোনো মানুষ দেখলে শিশু ভয় পায়। ভয় শিশুকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে। তবে এই ছোটখাটো বিষয়ে ভয় যদি প্রকট আকার ধারণ করে, তাহলে তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। কেননা এটি তার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত ভয়ে শিশুর মধ্যে কিছু প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়।। যেমন- বুক ধড়ফড় করা, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যাওয়া, ঘেমে যাওয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, মাথার তালু বা হাত-পায়ের তালু গরম হয়ে যাওয়া, বমি আসা, বুকে ব্যথা, শরীরের কোথাও ব্যথা অনুভব করা, শরীর দুর্বল অনুভব করা ইত্যাদি। অনেক সময় শিশুর এ ধরনের শারীরিক পরিবর্তন দেখে বাবা-মা ভয় পেয়ে যান। মনে করেন এগুলো শারীরিকভাবে ক্ষতিকর কোনো বিষয়। কিন্তু ভয় পেয়ে এমন প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক। শিশুর অহেতুক ভয় প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য অভিভাবক হিসেবে কী করা উচিত চলুন জেনে নিই-

·      শিশুর ভয়ের কারণ জানার চেষ্টা করুন। যদি আপনি তা বুঝতে পারেন শিশু ঠিক কখন এবং কোন বিষয়টি নিয়ে ভয় পাচ্ছে, তাহলে অভিভাবক হিসেবে আপনার উচিত হবে সে সময় সন্তানের সঙ্গে থেকে তাকে সাহস জোগানো, তার ভয় যে অমূলক তা বোঝানো।

·       শিশুকে আশ্বস্ত করুন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করুন। বলুন, সে যে বিষয়ে ভয় পাচ্ছে তা স্বাভাবিক। এতে আপনি যে শিশুর এই ভীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তা সে বুঝতে পারবে। এবার তাকে আশ্বস্ত করুন যে, আপনার সঙ্গে থাকলে তার কিছুই হবে না। এটি শিশুর ভীতি কমাতে সাহায্য করবে। 

·      প্রায় প্রতিটি শিশুর মধ্যেই ডাক্তার, ইনজেকশন- এ বিষয়গুলোর প্রতি ভয় থাকে। তাই এই ভয়গুলোর প্রতি শিশুকে স্বাভাবিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করুন। খেলাচ্ছলে শিশুকে বুঝিয়ে দিন আমাদের বন্ধু, আমাদের অসুখ হলে ডাক্তার আমাদের সাহায্য করে।

·      তেলাপোকা বা টিকটিকি দেখে ভয় পায় অনেক শিশুই। যদিও খুবই নিরীহ প্রাণী এরা। এগুলো দেখে শিশুর অতিরিক্ত ভয় প্রকাশ পেলে তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে যে, এগুলো কোনো ক্ষতি করে না।

·      শিশুকে তার ভয়ের বিষয়গুলোর থেকে ভয় কাটিয়ে উঠতে অন্য বিষয়ে ব্যস্ত রাখুন। সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বিষয়ে তাকে অভ্যস্ত করে তুলুন।  

·      শিশুর ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য বাবা-মায়ের কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন। আমরা অনেকেই বিভিন্ন সময় শিশুকে খাওয়াতে বা ঘুমপাড়াতে গিয়ে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকি, যা তাৎক্ষণিকভাবে শিশুকে দিয়ে সে কাজটি করিয়ে নিলেও শিশু মনে এ ভীতি স্থায়ী বাসা বেঁধে নেয়। তাই শিশুকে এভাবে ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকতে হবে। 

·      আমরা বড়রাই অনেক সময় শিশুর ভয়ে এমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই, যা শিশুর মধ্যে ভয়ের তীব্রতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের মধ্যে অহেতুক ভয় নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমে যা করা দরকার তা হলো, শিশুর সামনে ভয়ের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্ধকারে শিশুর ভয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। বিদ্যুৎ চলে গেলে শিশুটি যাতে ভয় না পায় সে জন্য হয়ত আপনিই শিশুটির নাম ধরে চিৎকার করে উঠলেন। আপনার এই চিৎকারের ফলে শিশুটি আশ্বস্ত না হয়ে তার মধ্যে অন্ধকারের প্রতি অহেতুক ভয় আরো বেড়ে যাবে। তাই শিশুকে নিরাপদ বোধ করাতে চাইলে আপনার স্বাভাবিক আচরণই যথেষ্ট।

·      শিশুর সঙ্গে কখনই নিজের ভীতির বিষয়গুলো বলা ঠিক নয়। এতে শিশু তার নিজের ভয়ের বিষয়গুলোর পাশাপাশি আপনার ভীতির বিষয়গুলো নিয়েও ভয় পাবে। তাই শিশুদের সামনে নিজের ভয়কে প্রকাশের বা প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।

·      বাবা-মায়ের উচিত যতটা সম্ভব শিশুর ভয়ের ব্যাপারগুলো শিশুর সামনে সহজ ও স্বাভাবিক করে তোলা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads