কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে ধান ও অন্যান্য দানাশস্য চাষের জন্য অধিকাংশ জমি ব্যবহূত হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দানাশস্যের পাশাপাশি শাক-সবজিও চাষ করা হয়। কিন্তু জমি স্বল্পতায় শাক-সবজির উৎপাদন তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। তাই বিকল্প উপায়ে শাক-সবজি উৎপাদনের কৌশল নিয়ে নতুন করে এখনই ভাবতে হচ্ছে। আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে বেশি শাক-সবজি উৎপাদন হয়।
তবে বর্ষার সময় দেশের বেশিরভাগ জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকার কারণে সবজি আবাদ করা যায় না। তাই দেশের নিচু ও জলমগ্ন এলাকাতে ভাসমান ধাপ পদ্ধতির মাধ্যমে সহজেই শাক-সবজি উৎপাদন করা যেতে পারে। দেশের যেসব এলাকা সারা বছর বা বছরের কিছু সময় জলাবদ্ধ থাকে এবং সেসব জলাবদ্ধ স্থানে যদি কচুরিপানা থাকে, সেই কচুরিপানা ব্যবহারের মাধ্যমে ধাপ তৈরি করে মৌসুমি বা সারা বছর সবজি ও সবজির চারা উৎপাদন করা যায়। সাধারণত মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে পার্শ্ববর্তী নদী, খাল অথবা জলাভূমি থেকে এই কচুরিপানা সংগ্রহ করা হয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভাসমান ধাপে মৌসুমি সবজি চাষ করা সম্ভব।
দেশের জন্য সম্ভাবনা ও গর্বের বিষয় হলো- বাংলাদেশের ভাসমান সবজি চাষ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী চাষ পদ্ধতির স্বীকৃতি পেয়েছে। এফএওর কৃষি ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ঐতিহ্য ব্যবস্থা (জিআইএএইচএস) ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৫টি দেশের ৩৬টি কৃষিব্যবস্থাকে কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা, ভাসমান ধাপে সারা বছর ফসল উৎপাদন খুবই লাভজনক এবং সবজির চাহিদা পূরণে বিরাট ভূমিকা রাখবে। জৈব পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন হওয়ায় কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না এতে। ফলে উৎপাদন খরচও অনেক কম। আরো আশার খবর হলো- দেশের এ প্রযুক্তি নিয়ে জাপান ও থাইল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে গবেষণা চলছে। এর মাধ্যমে চাষের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে তারা। আমাদের দেশে ভাসমান সবজি আবাদ সম্প্রসারণের জন্য কাপ্তাই হ্রদকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় যেখানে জলাবদ্ধতা কিংবা পর্যাপ্ত পানি আছে, সেখানে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে চাষ।
বকুল হাসান খান
টেকনিক্যাল অফিসার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ি, ঢাকা।